Read Time:8 Minute, 1 Second

আমেরিকা একটা ফ্রি কান্ট্রি। মাল্টি রেইজেস, মাল্টি ইমিগ্রেন্ট কান্ট্রি। শুধু বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্ট’রাই নহে, টোটাল ইমিগ্রেন্ট পপুলেশনের ৯০% পপুলেশন মেইনস্ট্রিম পলিটিক্সের খোঁজখবর জানেনা, খোঁজখবর রাখেনা। মেইনস্ট্রিম পলিটিক্সের পেছনে হাটেনা এবং তেমন ভালো বুঝেনাও না। ইমিগ্রেন্ট পপুলেশনের ফার্স্ট জেনারেশনের সামান্য সংখ্যক মানুষ মেইনস্ট্রিম পলিটিক্সের কিছু খোঁজখবর রাখে বা বুঝে, সেটাও বেশ ভাসাভাসা।
প্রথমেই বলেছি যে, আমেরিকা একটি ফ্রি কান্ট্রি।
এখানকার মূলধারার নারীপুরুষ কে কখন কার সাথে ঘর সংসার গড়লো, কে কখন কাকে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড বানালো, কে কখন ব্রেক-আপ করলো, সেই নিয়ে সামান্যতমও উদ্বিগ্ন নয়।
কে কখন ব্যংক্রাস্পি করলো, কে কখন ক্রিমিনাল কেইসে জেল খাটলো, কে কখন ধাক্কার ব্যবসায় জেল খাটলো, ডিপোট হলো, কে কখন ব্রান্ড জালিয়াতি মামলায় জেল খাটলো, কে কখন ফুডস্টাম্প কেলেঙ্কারি, নারী কেলেঙ্কারি ঘটালো, সেই নেয়েও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
অথচ এই মানুষগুলিই যখন তাদের নেতা নির্বাচন করে, তখন সেই নেতার চরিত্রগত প্রতিটি দিক সূক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ ও বর্জন করে।
সব চাইতে বেশী অপছন্দ করে নারী কেলেঙ্কারি ঘটানো নেতাকে।
যদিও বিবাহ করার আগে নেতার কয়টা বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড ছিলো, কয়টা ব্রেক-আপ করলো, সেটাকে নেতার চরিত্রগত ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করেনা।
কিন্তু বিবাহ করার পরে পরকীয়ায় জড়িয়ে সংসার ভাঙা নেতাকে এরা সিরিয়াসলি প্রত্যাখ্যান করে।
এর পরেই অর্থ কেলেঙ্কারিকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
জর্জ স্টোনম্যান ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ৩৩’তম গভর্নর। নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে তিনি তার দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ৭ বছর দুইশত বেয়াল্লিশ দিনের মাথায় তাকে চলে যেতে হয়েছে।
এন্থনি ভিলারিগোসাকে লস এঞ্জেলেসের বেস্ট মেয়রদের(টপ ফাইভ) একজন ধরা হয়।
মাত্র ৮ বছর আগে তার দ্বিতীয় মেয়াদে পরকিয়ায় জড়িয়ে স্ত্রীর সাথে ডিভোর্সের ঘটনায় ক্ষমতা হারানোর উপক্রম হয়েছিলেন। অথচ তার মেয়রশীপের দ্বিতীয় মেয়াদেই তাকে ক্যালিফোর্নিয়ার ভাবি গভর্নর ধরা হয়েছিলো, যেটা আর সম্ভব হলোনা।
ফলস্রুতিতে দুই মেয়াদে গভর্নর হয়ে অবসর কাটানো জেরি ব্রাউন আবার অপ্রত্যাশিত ভাবে গভর্নর হলেন।
ভিলারিগোসা অনেক চেষ্টা ও কাঠখড় পুড়িয়ে ৬ বছর পরে এসে এবার গভর্নর প্রাইমারীতে রান করেছিলেন, কিন্তু গেভিন নিউসমের নিকটে হেরে গেলেন। হিস্পানিক কমিউনিটি তাকে ঠিকমত গ্রহন করলে তিনিই হতেন পরবর্তী গভর্নর। বিশ্লেষক’রা মনে করেন,
নারী কেলেঙ্কারির জেড়টা রয়েই গিয়েছিলো হিস্পানিক কমিউনিটির মাঝে।
মেইনস্ট্রিম পিপলস’রা সর্ববিষয়ে ক্লিন ইমেইজের মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করে।
নিজেরা খারাপ থাকলেও কমিউনিটি কিম্বা জাতির নেতৃত্বকে খারাপের হাতে কেহই তুলে দিতে চায় না।
নেতা নির্বাচনে নারী ও অর্থ কেলেঙ্কারিকে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে।
এবার আসুন দেশে কিম্বা এই পাশ্চাত্যের আমাদের দেশীয় মানুষদের প্রসঙ্গে :
দেশে অবস্থানকারী ভাই বন্ধুদের প্রসঙ্গ আপাততঃ টানছিনা। প্রবাসী কিম্বা দেশের, সকলেই তো অলমোস্ট একই বাঙালি আমরা। তাই
আমাদের কমিউনিটির ব্যাপারেও এত ফিরিস্তি না দিলেও চলবে। বাঙালি মানে সেইরাম বাঙ্গালী আমরা! দুনিয়ার যেই প্রান্তে যাই, সেই প্রান্তেই আমরা মাশা’আল্লাহ, আমাদের বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, শ্রাবণ, ভাদ্র, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত বসন্ত সব বহন করে নিয়ে যাই।
নিয়ে যাই ৫২, ৫৭, ৬৯, ৭১, ৯০, ৯৬ কিম্বা
১৫, ১৬, ২১, ২৬, ৩০… সব। পারলে কিছু ধারকরেও নেই। ঐসব নেই ভালোকথা, সেই সাথে নেই দেশের সকল উজ্জীবিত চেতনা, চেতনার রাজনীতি।
আর রাজনীতি নামক সুয়েরেজ লাইন বেয়ে নিয়ে আসি গালাগালি, মারামারি, গুতাগুতি, কিলাকিলি, চুলাচুলি… হেন নিকৃষ্ট উপাদান নেই যেটার চর্চা এই প্রবাস কমিউনিটিতে আমরা করিনা!
এই লেখাটা যখন লিখতে শুরু করি(ডেনভার এয়ারপোর্টে বসে) ঠিক সেই সময়েই নিউইয়র্কে
একটি দলের অঙ্গসংগঠনের সৈনিক’রা গালাগালি গুতাগুতি ও চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি চালাচ্ছিলো!
আর আমার প্রিয় লস এঞ্জেলেস সিটিতে চলছিলো বাঙালি কমিউনিটির একটা সংগঠনের নির্বাচন নামক
প্রহসন। প্রহসন নিয়ে অনশন, টেনশন, টাউনহল মিটিং, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকশন বানচাল ইত্যাদি ইত্যাদি।
ভূমিকাতে যেই কথা শুরু করেছিলাম, দেশের মানুষদের কথা দূরে থাক, আমরা যারা এই উন্নত দেশে বসবাস করছি, উন্নত চিন্তাধারার মানুষদের মাঝে বসবাস করছি, আমরা কি কোনদিনও এদের থেকে উন্নত চিন্তাধারা গ্রহণ, ধারণ ও লালন করতে পারবোনা? আমরা কি নেতা নির্বাচনে নারী কেলেঙ্কারির ও অর্থ কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের প্রত্যাখ্যান করতে পারবোনা?
কথার বেলায় আমরা একেকজন মহা সাধু, অন্ততঃ সাধুবাবার গামছা পাটক্ষেত থেকে উদ্ধারের আগপর্যন্ত তো বটেই; কিছুদিন কাছিমের মত মাথা গুঁজে থেকে বিপদ কেটেগেলে আবার মাথা উঁচু করে হাটতে অভ্যস্ত হয়ে যাই। আর আমাদের নেতৃত্বের পাগোল মানুষগুলি নেতৃত্বের স্বার্থে সব কিছু বেমালুম চেপে যায়!
ছোট্ট এই কমিউনিটিতে চক্ষুলজ্জায় ধিক্কারটুকুও জানাতে ব্যর্থ হই। ধিক আহমেদ ফয়সাল, প্রথমে
তোমাকেই ধিক!

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রে নারী বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ৩
Next post তানজানিয়ায় ফেরিডুবিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৬
Close