Read Time:7 Minute, 18 Second

কাজী মশহুরুল হুদা :

জনাব মোয়াজ্জেম হোসেন। লস এঞ্জেলেসের একজন সুপরিচিত ব্যাক্তিত্ব। একজন প্রবাসী বাংলাদেশী হয়েও তিনি এই আমেরিকার বুকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেকে অর্থশিল করতে পেরেছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি কমিউনিটির বিভিন্ন ইভেন্টগুলোতে অনুদান দিয়ে আসছেন। বর্তমানে তিনি এই লস এঞ্জেলেসে একজন শীর্ষ শ্রেণীর ডোনার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ডোনার হওয়ার কারণে মোয়াজ্জেম হোসেন কমিউনিটির সামনে কথা বলার সুযোগ পান।

যে কথা বলতে চাই, তা হচ্ছে- গত ১৯ জানুয়ারি ২০২০ বাফলার এ্যাপ্রিসিয়েশন নাইটে হঠাৎ করে তিনি কিছু নছিয়ত করলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাজ সংবাদ পরিবেশন করা। সেই সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে নিজেদের ছবি ছাপান বা নিজেই সংবাদ হয়ে যান কেনো? এটা করবেন না। ইত্যাদি, ইত্যাদি।’

আমি টেবিলে বসে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- ‘মনে হলো তীর ছুড়লেন, কিন্তু কার দিকে তাক করে ছুড়লেন তা ঠিকঠাক বোঝা গেলো না।’

এ লেখায় তার অবগতির জন্য উল্লেখ করছি, প্রবাসে, বিশেষ করে লস এঞ্জেলেসে কেউই পেশাদার সাংবাদিক নন বা নেই। যারা এখানে সাংবাদিকতা করেন তারা শুধুই শখের বসে এবং কমিউনিটির স্বার্থে করেন। কেউই অর্থ উপার্জনের জন্য সাংবাদিকতা করেন না। বরং তারা নিজের অর্থ খরচ করে কমিউনিটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। যারা করছেন তারাও আপনাদের মত কমিউনিটির মানুষ। তাদের নিজস্ব প্রতিভা, যোগ্যতা বা সংগঠন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই সঙ্গে তারা লেখা লেখি ভালোবাসেন বলেই সাংবাদিকতার মত একটি সৃজনশীল কাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এখানে সবাই ই সৌখিন সাংবাদিক।

সাংবাদিকরা সত্য কথা বলেন এবং তা প্রকাশ করেন। এই সব সত্য কথায় অনেকের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছেন যারা এই মাধ্যমকে ব্যবহার করেন। এমনকি প্রচার প্রিয় কতিপয় অপ্রিয় মানুষও আছেন যারা সৃজনশীল এই লেখকদের ব্যবহার করে অন্যের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেন। তারা সাংবাদিক না হয়েও লেখক বনে যান।

আবার কেউ কেউ আছেন যারা হলুদ সাংবাদিকতা করেন। দুষ্টু প্রকৃতির সাংবাদিক। তাদের কাজই হচ্ছে অন্যের পেছনে লাগা, ভালোর মধ্যে মন্দকে নেড়েচেড়ে খিচুড়ি পাকানো।

কিন্তু কমিউনিটিতে অপেশাদার সাংবাদিকবৃন্দ তাদের সময় নষ্ট করে, কর্ম ঘন্টা নষ্ট করে, নিজেদের উপার্জন থেকে বঞ্চিত হয়ে কমিউনিটির বিভিন্ন ইভেন্টগুলোতে গিয়ে তাদের সংবাদ, তাদের বক্তব্য ও ছবি তুলে ধরেন। সে ক্ষেত্রে কোন সাংবাদিক কমিউনিটির একজন হয়ে ছবি তুলতেই পারে, বক্তব্য দিতেই পারে, নিজেকে প্রচারও করতে পারে। এ জন্য ইর্ষান্বিত হওয়ার যৌক্তিকতা দেখি না।

এ ক্ষেত্রে পেশাদার ও অপেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে একটি পার্থক্য উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাই। একটি অনুষ্ঠানের জন্য ভিন্ন কমিউনিটির সাংবাদিকদের উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, তারা জানিয়েছিল তোমাদের অনুষ্ঠান হবে আফটার আওয়ার। অতএব, দুঃখিত আমরা থাকতে পারব না। আর কমিউনিটির সকল আফটার আওয়ারেই এই সকল অপেশাদার সাংবাদিকদেরকে আপনারা ডাকলেই পেয়ে যান। কি জন্য? কারণ তাদের মধ্যে কমিউনিটির চেতনা কাজ করে।

মনে রাখতে হবে অনেক সাংবাদিক তারা নিজেরাই কমিউনিটির সংগঠক। তাদের আলাদা প্লটফর্ম রয়েছে, লেখার যোগ্যতা রয়েছে। তারা তাদের এই মৌলিক কর্ম তাদের নিজস্ব প্রচার মাধ্যমে তুলে ধরতেই পারে।

তবে তিনি (মোয়াজ্জেম হোসেন) তাদের সমালোচনা করতে পারেন- যারা আদৌ সাংবাদিকতার জ্ঞান রাখেন না, লেখার ক্ষমতা নেই কিন্তু নিজেকে অহেতুক ভাবে কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক বলে জাহির করেন। অর্থের বিনিময়ে লেখক হন, লেখার ক্ষমতা নেই কিন্তু বই প্রকাশ করে ফেলেন। সবে মাত্র এই পেশাতে এসেই সিইও হয়ে যান। সিনিয়রদের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক জগতের সকলের সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করেন। অর্থের বিনিময়ে ভিডিও তৈরি করে নিজের নামে বাহবা নেন। চাইলে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে পারেন।

লস এঞ্জেলেসে লেখলেখিতে, কবিতায়, সাহিত্যে, সাংবাদিকতায় কার কত দৌঁড় আছে, কার কত গ্রন্থ আছে সেটা অনেকের জান আছে। অনেকের কাছে এ বিষয়টি মনে হতে পারে যে কেউ জানে না, কিন্তু না, অনেকেরই বিষয়গুলো জানেন।

আমার কথা হচ্ছে- জনাব মোয়াজ্জেম হোসেন এই দুই শ্রেণীকে আলাদা করে দেখান।

আমরা আশা করব- কমিউনিটির কিছু সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ, অর্থের বিনিময়ে এধরণের মূর্খ, পরনির্ভর ও চৌর্যবৃত্তি লিপ্তদের অর্থের বিনিময়ে মূল্যায়ন করার থেকে বিরত থাকবেন।

আসুন, আমরা প্রবাসে সুস্থ ও সুন্দর কমিউনিটির গঠনে যোগ্যতমদের মূল্যায়নে এগিয়ে আসি। সৃজনশীলতা নিরুপনে অর্থই যেনো যোগ্যতার মাফকাঠি না হয় সেটি খেয়াল রাখি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post লস এঞ্জেলেসের নেতা সমাচার
Next post ২০২০ আদম শুমারি গণনায় বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রয়োজনীয়তা
Close