Read Time:6 Minute, 17 Second

ব্যক্তিগত গাড়ি ঘিরে হাজারও নেতাকর্মীর সেই ভিড় ও মোটরসাইকেলের বহর আর নেই। নেই ভাই ভাই ডাক। ঘনিষ্টজন ভেবে যাদের বিভিন্ন পদ দিয়েছিলেন আজ তারাও পাশে নেই। বরং চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যে কোনো সময় ফেঁসে যাওয়ার আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এজন্য অনেকটা নিঃসঙ্গ দিন কাটাচ্ছেন তারা। বলছি- ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ হারানো সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর কথা।

পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে- এ দুজন এখন তাদের ঘনিষ্ঠজনদেরও এড়িয়ে চলছেন। এদিকে ক্যাসিনো সম্রাট (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ) আজ গ্রেফতার হয়েছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে অপরাধ করে কেউ ই রেহাই পাবেন না। আর এ জন্য আতঙ্ক আরও বেশি তাড়া করে বেড়াচ্ছে দুজনার।

প্রসঙ্গত, গণভবনে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় বিদেশ সফরের আগে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানানোরও সুযোগ হয়নি শোভন-রাব্বানীর। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শোভন-রাব্বানীর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।

জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ হারান এ দুই নেতা।  চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে তাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ দুই নেতার চলাফেরার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। গোয়েন্দারা এদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। যে কোন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগে কোমড়ে দড়ি পড়ার ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। নৈতিক স্খলনের দায়ে ছাত্রলীগের পদ হারানো রাব্বানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তিনি পদ ছাড়েননি। তবে ডাকসুর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাকে অনুপস্থিত দেখা গেছে।

ছাত্রলীগের নেতারা জানান, নতুন নেতৃত্ব আসার পর শোভন-রাব্বানীর পুরনো দিনের ঘনিষ্ঠজনদের অনেকেই এখন তাদের এড়িয়ে চলছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্য সমালোচনা করছেন তাদের। সম্প্রতি রাব্বানীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রেজার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ও সেখানে গোলাম রাব্বানীর কমেন্ট খুব আলোচিত হয়।

জানা যায়, পদ হারানোর পর থেকেই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন তার কাঁঠালবাগানের বাসায় রয়েছেন। ছেলের এ দুঃসময়ে সঙ্গ দিতে ঢাকার বাসায় এসেছেন বাবা-মা। শোভনের কাঁঠালবাগানের বাসায় নেতাকর্মীদের আনাগোনাও কমেছে। খুব কাছের নেতাকর্মীরা ছাড়া কেউ শোভনের কাছে যাচ্ছে না। তবে তার একান্ত অনুগত নেতাকর্মীরা মনে করেন, শোভন  প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। পদ হারানোর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট থেকেও পদত্যাগ করেছেন।

অন্যদিকে, রাব্বানী এখন বেশিরভাগ সময় হাতিরপুলে তার মোতালেব প্লাজার বাসায় কাটাচ্ছেন। খুব প্রয়োজন না হলে বাসা থেকে বের হন না।

বর্তমান পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হারানোর উপক্রম হয়েছে দুজনের। এমনকি নেত্রীর দৃষ্টিতে নেই তারা। যেখানে নিজের পছন্দে দলের প্রধান এ দুজনকে ছাত্রলীগের চাবিটি দিয়েছিলেন সেখানে এমন কাণ্ডে হতাশ শেখ হাসিনা।

তবে নিজেদের ইমেজ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতারা।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ হয়। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেন। বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১০ মাস আগেই তাদর পদ হারাতে হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাদের ‘বাধ্যতামূলক পদত্যাগ’র মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। আর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post লন্ডনে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের তালিকায় টিউলিপ
Next post সম্রাট গ্রেফতারের নেপথ্যে
Close