Read Time:10 Minute, 0 Second

মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গুলি-গ্রেনেডের ভয়ে যারা পালাবে না- এমন তরুণ যুবক, সাহসী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।’

সোমবার নয়াপল্টনে মুক্তিযোদ্ধা দলের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা নির্বাচন করেছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের নামে সরকার নাটক করেছে। দেশের ভেতরে-বাইরে কেউ এ নির্বাচন গ্রহণ করেনি। জোর করে ক্ষমতা দখল করে দেশের মানুষের বুকের ওপর বসে আছে তারা। ১৯৭৫ সালে দেশের মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল আওয়ামী লীগ, এখন ছদ্মবেশে গণতন্ত্রের লেবাস ধরেছে।’

বাংলাদেশকে পরাধীন করে রাখার ক্ষমতা কারও নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর, সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাজ করেন। সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেকে তৈরি করুন আপনাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে, প্রতিরোধে কাজে লাগাতে পারেন, নিঃসন্দেহে আপনারা কোনোদিন পরাজিত হবেন না।’

তিনি বলেন, ‘কোনো দেশ যদি মনে করে বাংলাদেশের ওপর প্রভুত্ব করবে, বাংলাদেশের মানুষ কোনো দিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করেনি, করবেও না। মুগল, ব্রিটিশ, পাকিস্তান কোনো আমলে করেনি; এখনো করবে না। আমরা বৃদ্ধ হয়ে গেছি, এখনো লড়ছি, জেলে যাচ্ছি-আমরা বিশ্বাস করি এই দেশকে পরাধীন করে রাখার ক্ষমতা কারও নেই।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি বেশি দূর যেতে বলব না। পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখেন- ইমরান খান। আমরা অনেকে পাকিস্তানের নাম শুনলে আঁতকে উঠি; অন্যভাবে চিন্তা করি। সেই ইমরান খান দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে তরুণদের মাঠে নিয়ে আসতে হয়, কীভাবে মহিলাদের মাঠে আনতে হয়। আমাদের চেয়ে তাদের ওপর কম অত্যাচার হয়নি। তারা সেনানিবাস আক্রমণ করেছে, তারা মার্কিনিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’

‘পাকিস্তানে এই অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে কেউ কোনোদিন টিকতে পারে না। ইমরান খান জেলে গেছে, ৩৪ বছর সাজা হয়েছে। তার দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জোর করে দলবদল করা হয়েছে এবং দলীয় প্রতীকও নিয়ে নিয়েছে। তারপরও জেলে বসে বলেছেন, “নির্বাচনে যাও।” স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তরুণরা’, যেোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের বুকের মধ্যে যে বেদনা-যন্ত্রণা আছে, সেই যন্ত্রণাকে সঠিক পথে প্রবাহিত করেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ ২৫ মার্চ কালরাত। এখন আওয়ামী লীগ এটা অস্বীকার করতে পারে। যখন ব্যর্থ হয়েছে, যখন পাকিস্তানী প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্যরা অগোচরে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে, তখন আমাদের তৎকালীন রাজনীতিবিদরা কেউ দেশে থাকেনি, পালিয়ে চলে গেছেন, ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। মূল নেতা পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানে চলে গেছেন। তারপরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় দেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বলেই ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফকির আলমগীরের একটা চমৎকার গান আছে, দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা; কারও দানে নয়। রক্তের দাম দিয়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি; কারও দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। আপনারা রুখে দাঁড়ান। আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিশ্চয় সেই বিষয়গুলো দেখবে, অতীতেও দেখেছে।’

তিনি বলেন ‘ আমি বিশ্বাস করি, এই যে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী রেজিম শাসকগোষ্ঠী জোর করে কলাকৌশল করে বিভিন্ন নাটক করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তাদের একটি দিন চলে যেতেই হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে; মানুষকে সঙ্গে নিয়ে না নামলে আপনারা জয়ী হতে পারবেন না। শ্রমিক ভাইদের নামাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ভাইদের নামাতে হবে। সব জায়গা থেকে মানুষ এগিয়ে আসবে। সেইদিনই হবে সত্যিকার অর্থে সফল গণঅভ্যূত্থান এবং বিজয়।’

সমাবেশে নেতাকর্মীদের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এত সহজ নয়।’দেশের মানুষের দূরাবস্থার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই রমজান মাসে চিড়া-মুড়ি খাওয়ারও অবস্থায় নেই মানুষ।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ না করায় মহিলা দল ও ছাত্রদলের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতন হয়, কোনো প্রতিবাদ নেই। যারা পুলিশের হুইসেল শুনে পালাবে না তাদের নেতৃত্বে আনতে হবে।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, তা ছিল একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমাদের গণমানুষেরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে ভোটের মাধ্যমে। শান্তিতে বসবাস করতে পারবে, কথা বলতে ও লিখতে পারবে স্বাধীনভাবে। সেই আশা ও ভরসা নিয়ে সারাদেশের মানুষ যুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিল। সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু ৫৩ বছর পর সেই বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে।’

২০১৪ সালে নির্বাচনে কেউ অংশ নেয়নি, কেউ যেন অংশ নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছিল সরকার- এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৮ সালে রাতে নির্বাচন করেছে। আর এবার এক নাটকীয় মাধ্যমে নিজেরা ডামি প্রার্থী দিয়ে নিজেরাই ভোট করেছে। বিরোধী দল হিসেবে যারা দাবি করে, তাদেরও আসন কর্তন করা হয়েছে। এ নির্বাচন কেউ গ্রহণ করেনি। দেশের জনগণ ভোট দেয়নি। এমনকি বিশ্ব এই নির্বাচন গ্রহণ করেনি।’

একটি শাসক গোষ্ঠী এই দেশের মানুষের বুকের ওপরে চেপে ধরে বসে আছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই, শাসনতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকার নেই চেয়ারগুলোতে বসে থাকার, শাসন করবার।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম’র সভাপতিত্বে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড এবং কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর প্রকাশ্যে প্রথম কোনো সমাবেশে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল।

সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।এ ছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ভারতীয় মশলা-পেঁয়াজ কার ঘরে নাই, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
Next post লস এঞ্জেলেসে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উদযাপন
Close