Read Time:6 Minute, 19 Second

পোশাকশ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে হুমকি বোধ করছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে দেশটির কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তার দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন।

গত বৃহস্পতিবার শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন নীতি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিক আন্দোলনের নেতা কল্পনা আক্তারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কল্পনা জানিয়েছেন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। পরামর্শকের ভূমিকা রেখেছে। আর এ জন্য তিনি (কল্পনা) এখনো বেঁচে আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রকে পরবর্তী আলোচনায় জিজ্ঞেস করবো। কল্পনা আক্তার বাংলাদেশে ২০১০ সালে একবারই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে আরো একাধিক শ্রমিকনেতা চাকরিরত অবস্থায় আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি তুলে নেওয়া হয়। আপনারা জানেন যে গার্মেন্ট খাতে যে অরাজকতা বা যে সমস্যাগুলো হয়, তার ধরন ক্ষণস্থায়ী। হঠাৎ করে হয়, হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আপনারা এটা জানেন কি না, জানি না। রানা প্লাজা ধসের পর পশ্চিমা দেশের কিছু ক্রেতা যখন কারখানাগুলোকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করল, তখন কল্পনা আক্তার এবং আরও দু-একজন মিলে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তো কল্পনা আক্তার বলেছেন যে তিনি আমাদের বা অন্য কারও কাছ থেকে হুমকির শিকার হয়েছেন, এর ব্যাখ্যা আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চাইব।’

কল্পনা আক্তার বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নির্বাহী পরিচালক।

‘কল্পনা আক্তার খুব সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করে সেটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন’ উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কাজেই উনি (কল্পনা আক্তার) ওই কথা (হুমকি প্রসঙ্গে) আদৌ বলেছেন কি না, বলে থাকলে কিসের ভিত্তিতে বলেছেন, এটা খোঁজার দায়িত্ব বোধ হয় সাংবাদিকদের। কিন্তু তিনি হুমকি বোধ করেছেন এটা অতীতে তিনি বাংলাদেশের কাউকেই জানাননি। এটার সত্যতা কতটা তা আমরা অবশ্যই জানতে চাইব।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্মারকে (প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম) সই করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, যাঁরা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন, ভয় দেখাবেন, তাঁদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম নীতি নিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্বিগ্ন হওয়ার যৌক্তিক কোন কারণ আছে কি না, জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মোটেই নেই। আমি পরিস্কারভাবেই বলছি ওই মন্তব্য পোশাকশিল্পকে উদ্দেশ্য করে নয়।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বক্তব্য ছিল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সংস্থার (এপেক) সম্মেলনে। এটা শুধু পোশাকশিল্প বা টেক্সটাইল শিল্প বা বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক নয়। এটি একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যার মাধ্যমে তারা তাদের দূতাবাসগুলো বা রাষ্ট্রদূতদের নিয়োগ করছেন বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে। যেকোনো কিছু সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হলে ভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এই পদক্ষেপের ফলে (যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম নীতি) কোনোভাবেই পোশাকশিল্পের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আয়ের রেকর্ড আ.লীগের
Next post আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগ অগ্নিসন্ত্রাস করছে: রিজভী
Close