Read Time:8 Minute, 32 Second

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ঘটনায় দেশের ৮৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। তারা রোজিনা ইসলামের জামিন এখনও না হওয়ায় বলেন,নাগরিক সমাজসহ সবাই আশা করেছিল যে ‘ঘটনার সংবেদনশীলতা, নাগরিকের জামিন পাওয়ার অধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে দৃঢ়তা প্রদর্শন করে’ বৃহস্পতিবারই তাঁর জামিন মঞ্জুর হবে। কিন্তু জামিন আদেশের দিন রোববার (২৩ মে) ধার্য করা হয়। ‘রোজিনাকে জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদালতের এই বিলম্ব আমাদের যারপরনাই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ করেছে।’

বিবৃতিতে তাঁরা আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার, রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁর ওপর নির্যাতনের বিষয়ে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনারও জোর দাবি করছি।’

এতে বলা হয়, ‘…স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মনগড়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ নারী সাংবাদিক রোজিনাকে গ্রেফতারের পর দেশ ও বিদেশে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া হয়। সাংবাদিক সমাজ, নাগরিক সমাজ, এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকেও রোজিনাকে গ্রেফতার অনাকাঙ্ক্ষিত এবং তা সরকারকে বিব্রত করেছে বলে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘও এ গ্রেফতারের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এবং বিদেশি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

বিবৃতিদাতারা হলেন শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সুলতানা কামাল, হাফিজ উদ্দিন খান, রাশেদা কে চৌধূরী, হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক, জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, স্বপন আদনান ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।

শিক্ষাবিদদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি আর আবরার, আসিফ নজরুল, গীতি আরা নাসরীন, রোবায়েত ফেরদৌস, সামিনা লুৎফা, তানজিম উদ্দিন খান, শাহনাজ হুদা, সুমাইয়া খায়ের, জোবায়দা নাসরিন, কাজী মারুফুল ইসলাম, গোবিন্দ চক্রবর্তী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনু মুহাম্মদ, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সাঈদ ফেরদৌস, নাসরিন খন্দকার ও সায়েমা খাতুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইদুল ইসলাম ও সাদাফ নূর, গবেষক মেঘনা গুহঠাকুরতা ও নোভা আহমেদ।

বিবৃতিতে নাম রয়েছে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, পারভীন হাসান, ফিরদৌস আজিম, আকমল হোসেন, এশিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মাহফুজা খানম, মানবাধিকারকর্মী শারমীন মুরশিদ, শিরিন প হক, সঞ্জীব দ্রং, পল্লব চাকমা, ফষ্টিনা পেরেরা, অরূপ রাহী, মুক্তশ্রী চাকমা, নূর খান, রেহনুমা আহমেদ, ইলিরা দেওয়ান, সুব্রত চৌধুরী, ইজাজুল ইসলাম, হানা শামস আহমেদ, রেজাউর রহমান ও সালমা আলীর।

আরও রয়েছেন সেলিম জাহান, শামীম আজাদ, বিনা ডি কস্টা, আবু সাঈদ খান, তবারক হোসেইন, পার্সা সাজিদ, লুবনা মরিয়ম, নায়লা জেড খান, সায়দিয়া গুলরুখ, ফওজিয়া খন্দকার, কাজী সুফিয়া আখতার, সুস্মিতা প্রিথা, ফিলিপ গাইন, রেজানুর রহমান, কনক চাকমা, মাহবুবুর রহমান, তায়েবা বেগম, শিমুল সাহা, কামার আহমেদ, সারা আফরিন, নাসিমুন আরা হক, রোজিনা বেগম ও আহমেদ কবির কিশোর।
গত সোমবার সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। রাতে তাঁকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে রোজিনা ইসলাম গত সোমবার দুপুরের পর পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর রাত সাড়ে আটটার দিকে রোজিনাকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে রাত ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদি হন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী।

পরে পুলিশ রোজিনা ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে। একই সঙ্গে রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। ওই দিন শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নাকচ করেন এবং রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন। সেদিন আদালতের নির্দেশে রোজিনাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

তার পর বৃহস্পতিবার (২০ মে ) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভার্চ্যুয়ালি জামিন শুনানি শেষে আগামী রোববার (২৩ মে) আদেশ দেওয়া হবে বলে জানায় আদালত।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ‘দেশের ইতিহাসে বিএনপির মতো ব্যর্থ বিরোধী দল একটিও নেই’
Next post আলোচিত সেই জেবুন্নেসা বিরোধী সংবাদ ঠেকাতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি
Close