Read Time:5 Minute, 49 Second

স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা তৈরির বিধান রেখে সংসদে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে রাজাকার, আল-বদর, আল শামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরির আইনি বাধা কাটছে।

রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি সংসদে তুললে পরে তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানান বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি খসড়া আইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেন।

এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও বিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। বিলটিকে ‘অসম্পূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা বিদেশে ছিল, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরও সনদ দেওয়া হচ্ছে। এটা বিব্রতকর।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের ভূমিকা তুলে হারুন বলেন, তখন তার বয়স ছিল ১০ বছর। তিনিও তো দাবি করতে পারেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা।

হারুনের আপত্তির জবাব দেন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ায় বিএনপির সমালোচনা করেন। পরে স্পিকার হারুনের প্রস্তাবে ভেটো দিলে তা নাকচ হয়ে যায়।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন বা খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করেছেন অথবা একক বা যৌথ বা দলীয় সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন তাদের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে।

বিলে বলা আছে, কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ১২ জন করা হয়েছে। আগের আইনে ৯ জন ছিল। কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা হবেন প্রধানমন্ত্রী। কাউন্সিলের আট জন সদস্য প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবেন। যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হবেন। উপদেষ্টা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত পাঁচ জন সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ফোর্স কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার অথবা কমান্ডারসমূহের মুক্তিযোদ্ধা, এই বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া, মন্ত্রণালয়ের সচিবও এই পরিষদে থাকবেন। কাউন্সিল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের নিবন্ধন প্রদান, সাময়িকভাবে স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে।

২০১৯ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সুপারিশও নেওয়া হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আইনের ভাষা পরিমার্জনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রীসভার বৈঠকে দুটি সংশোধনী দিয়ে ওই খসড়ার নীতিগত অনুমোদন করা হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা গত জুনে মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাঠানো হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post চমেক হাসপাতালের বাতাসে পোড়া গন্ধ, আর্তনাদ
Next post চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি, যা বললেন ব্লিঙ্কেন
Close