Read Time:6 Minute, 41 Second

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি ও মৈত্রী রক্তের অক্ষরে লেখা এবং এ মৈত্রী অবিচ্ছেদ্য। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সাথে ভারতের অবদানের কথা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

তিনি মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও ভারতের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।

পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মো: ফজলে আলীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ হোসেন চৌধুরীর পরিচালনায় সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. নীম চন্দ্র ভৌমিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: সালাউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক তালুকদার প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে ভারতের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া কখনো আমাদের পক্ষে ৯ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভবপর হতো না। একাত্তর সালে এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণার পর ভারতের সেনাবাহিনী আমাদের মুক্তিবাহিনীর সাথে একযোগে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ভারতের সেনাবাহিনীর শত শত সদস্য আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছেন। তাই ভারতের সাথে আমাদের যে মৈত্রী, আমাদের যে সম্পর্ক, সেটি রক্তের অক্ষরে লেখা। শুধু তাই নয়, যখন পাকিস্তানের কারাগারে থাকা বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় ঘোষণা হয়, তখন তৎকালীন ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত সংগঠিত করার জন্য পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন, সেজন্য আমি গভীর কৃতজ্ঞতাভরে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অবদানকে স্মরণ করি।’

১৯৭১ সালে ভারতের মানুষ বাংলাদেশীদের জন্য তাদের আঙ্গিনার দুয়ার যেভাবে খুলে দিয়েছিল, তেমনি তাদের হৃদয়ের দুয়ারও খুলে দিয়েছিল উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘এক কোটি মানুষ ভারতের যে বিভিন্ন পরিবারের সাথে আশ্রিত ছিল, তারা তাদেরকে বোঝা মনে করেনি, পরম আপন ভেবে আশ্রয় দিয়েছিল। ভারতের শিল্পী, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড় সবাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। কোলকাতা, আগরতলা, দিল্লীসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় রাস্তায় তারা আমাদের শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তাই ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী চিরঅম্লান এবং এই মৈত্রী রক্তের অক্ষরে লেখা।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং ভারতের নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আমাদের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরাও সামর্থ্য অনুযায়ী ভারতের প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি- এভাবেই বন্ধুত্ব সুদৃঢ় হয়।

উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করার মধ্যেই এ অঞ্চলের উন্নয়ন নিহীত উল্লেখ করে বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদ দু’দেশের মধ্যে আরো বেশি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন হাছান মাহমুদ।

ড. হাছান বলেন, ‘আমাদের দেশে বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল ভারতের এই অবদানকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে, ভারতবিরোধী বক্তৃতা দেয়। তাদের রাজনীতির অন্যতম মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ভারতবিরোধিতা এবং নির্বাচন এলে তাদের ভারতবিরোধী বক্তৃতা বেড়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘তারা যখন ক্ষমতায় ছিল আমরা দেখেছি, একদিকে দেশে বসে ভারতবিরোধিতা করে, আবার ভারতে গিয়ে একেবারে নতজানু নীতি অবলম্বন করে। তাদের নেত্রী ভারত থেকে দামী শাড়ি পরে এসে ভারতের বিরুদ্ধে কড়া বক্তৃতা দেন। বিএনপিসহ যেসমস্ত রাজনৈতিক দল ভারতবিরোধী রাজনীতি বক্তব্য দিয়ে প্রেস ক্লাব-নয়াপল্টন-টেলিভিশনের পর্দা গরম করেন, তারা আবার ভারতীয় হাইকমিশনে ইফতার করতে যান। আশা করবো, তাদের এই অপরাজনীতি বন্ধ হবে।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা লজ্জাস্কর: মুখ্যসচিব
Next post জেলখানায় নেতাকর্মীদের কষ্ট দেখে এসেছি : ইশরাক
Close