Read Time:12 Minute, 13 Second

করোনা মহামারি শুধু মানুষের জীবন নয়, বিপদগ্রস্ত করেছে অর্থনীতির চাকাকেও। তবে এর মধ্যেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। অন্যদিকে নতুন করে বিদেশে কর্মী যাওয়াও থেমে নেই। কিন্তু বিদেশগামীদের জন্য কভিডের টিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবাসী কর্মীদের জন্য টিকা নিশ্চিত করছে। তবে বিদেশগামী বা প্রবাসী পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নিবন্ধন করতে হবে।

কিন্তু এই কঠোর লকডাউনকালে বিএমইটির কেন্দ্রীয় অথবা স্থানীয় অফিসে গিয়ে এই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা কতটুকু বাস্তবসম্মত? আর এই কাজটি বাস্তবরূপরেখায় রূপান্তর করতে অগ্রণী ভূমিকায় চলে এলো বিদেশ যাত্রায় প্রবাসী কর্মীদের পাশে থাকা সাম্প্রতিক সময়ের এক অতিগুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ। আমি প্রবাসী অ্যাপ নিরাপদে ঘরে বসে নিশ্চিত করছে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন, যার সম্পন্ন সাপেক্ষে প্রবাসী কর্মীরা সুরক্ষা অ্যাপে লগ ইন করে ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে।

এই পর্যন্ত আনুমানিক ৭০ হাজারের কাছাকাছি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে গত ১৩ দিনে যা এক অনন্য সাফল্য। প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে গড়ে ৭ লাখ মানুষ বিদেশে তাদের কর্মসংস্থানে যোগদানের জন্য গমন করে, সেই হিসেবে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবাসী কর্মী মাত্র দুই সপ্তাহেই আমি প্রবাসী অ্যাপ দ্বারা বি এম ইটি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে ! kalerkantho

প্রবাসী কর্মীদের টিকা প্রদানের বিষয়টি জানাতে গত ৫ জুলাই এটুআই একটা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ (বিএমইটি) ব্যুরোর মহাপরিচালক শহিদুল আলম তাতে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে টিকা নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষার পাশাপাশি আমি প্রবাসী অ্যাপে নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব ইমরান আহমদ এবং বিএমইটি মহাপরিচালক জনাব শহিদুল আলম জানিয়েছেন, দেশে পাসপোর্টধারী কোটি মানুষ রয়েছে, তাদের মধ্যে কারা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে তা বিএমইটি নিবন্ধন ছাড়া নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই সেটি করা যাবে। ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ অ্যাপে নিবন্ধন করেছে। এটি বিএমইটির ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সাফল্যমণ্ডিত করেছে।

ঘরে বসে যে কেউ এই নিবন্ধন করতে পারবেন। গুগলরে প্লে স্টোর থেকে আমি প্রবাসী অ্যাপটি নামানো যাবে। চাইলে https://www.amiprobashi.com/ গিয়েও অ্যাপটিতে নিবন্ধন করা যাবে।

নিবন্ধন করতে হলে, প্রথমে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে আমি প্রবাসীতে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী পাসপোর্টটি স্ক্যান করতে হবে। এরপর প্রদত্ত তথ্য পাসপোর্ট ডাটাবেইজের ভেরিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সেই মেসেজ এলেই বিএমইটির নিবন্ধনটি করা যাবে। এই মেসেজ আসতে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

বিএমইটির নিবন্ধন হয়ে গেলেই প্রবাসীরা কভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির লক্ষ্যে সুরক্ষা অ্যাপে গিয়ে টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। বিএমইটি নিবন্ধন করা থাকলে সুরক্ষায় পাসপোর্ট নম্বর দেওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি যাচাই হয়ে যাবে। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন হয়ে গেলে নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে টিকা সেন্টার ও টিকা গ্রহণের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সেই টিকা নিয়ে কেন্দ্রে যেতে হবে।

এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে আমি প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি কভিড ভ্যাক্সিন রেজিস্ট্রেশন সম্ভব নয়। আর পাসপোর্ট ডাটাব্যাংকে তথ্য যাচাইকরণ সম্পন্নে প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট লিমিট রয়েছে। ফলে অনেকেরই মেসেজ পেতে দেরি হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে। এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানসংক্রান্ত সেবা আরো সহজ ও ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গত ৮ মে এই অ্যাপটি চালু করে। এর উদ্বোধন করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। বাংলা ট্র্যাক গ্রুপ এই অ্যাপটির কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর কাজে যুক্ত হয়েছে। kalerkantho

একনজরে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ-এর বিশেষ দিকগুলো দেখে নেওয়া যাক :
আমি প্রবাসী অ্যাপ-এ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া : গুগল প্লে স্টোর থেকে আমি প্রবাসী অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং নিজের মোবাইল নম্বর ও এককালীন ওটিপি-এর মাধ্যমে অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। অ্যাপে গিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন। অপশনে গিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ধাপগুলো পূরণ করে আপনার বিএমইটি ফর্মটি সম্পন্ন করুন এবং পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠান। নির্দিষ্ট করা পেমেন্ট করে বি এম ইটি নম্বরের জন্য আবেদন করুন এবং বি এম ইটি নম্বর পেতে অপেক্ষা করুন।

অনলাইনে পাসপোর্ট যাচাইকরণ : অ্যাপে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী স্ক্যানারের মাধ্যমে পাসপোর্টটি সঠিকভাবে স্ক্যান করে নিতে হবে। পাসপোর্ট নম্বরসহ প্রদত্ত তথ্য বিএমইটি লিংক ব্যবহার নিমিত্তে সরাসরি পাসপোর্ট ডাটাব্যাংক দ্বারা ভেরিফিকেশনের জন্য যাবে।

বিএমইটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে : স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেমেন্টের নোটিফিকেশন আমি প্রবাসী অ্যাপ ব্যবহারকারীর কাছে চলে যাবে, যার পাসপোর্ট যাচাইকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমি প্রবাসী প্রথম ইন- অ্যাপ পেমেন্ট গেটওয়ের ব্যবস্থা চালু করেছে।

চাকরির বিজ্ঞপ্তি এবং চাকরি খোঁজা : এ অ্যাপটির মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীরা সরকার অনুমোদিত এজেন্টদের খুঁজে পাওয়া, উপযুক্ত চাকুরির সন্ধান, আবেদনপত্র পূরণ ও জমাদান এসক্রান্ত নানা প্রয়োজনীয় সেবা সহজেই খুঁজে পাবে। শুধু প্রবাসী কর্মী নয়, এই অ্যাপটিতে সরকার অনুমোদিত এজেন্ট ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন অংশগ্রহণ করতে পারবে, সরকার অনুমোদিত প্রকৃত চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে ।

ইন-অ্যাপ যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা : ব্যবহারকারীরা সংশ্লিষ্ট যেকোনো গ্রুপের সঙ্গে যেমন রিক্রুটিং এজেন্সি, বৈদেশিক নিয়োগকারী বা চাকরিদাতা, আমি প্রবাসী টিম- অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ ও বার্তা আদান প্রদান করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সব সার্ভিস সেন্টারের তথ্যাবলি : পাসপোর্ট অফিস, রিক্রুটিং এজেন্সি, ট্রেনিং কেন্দ্র থেকে শুরু করে মেডিক্যাল সেন্টারের সব বিজ্ঞপ্তি ও নোটিসসহ জিও লোকেশন সার্ভিস সব কিছুর হালনাগাদ করা থাকে আমি প্রবাসী অ্যাপ-এ।

হেল্প সেন্টার/সাহায্যকেন্দ্র : যেকোনো ধরনের সমস্যায়, যেকোনো সময়ে, যেকোনো প্রয়োজনে কল সেন্টারসহ ইন- অ্যাপ যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অ্যাপ ব্যবহারকারীর পাশে থাকা হয়।

প্রকল্পটির উদ্যোক্তা বাংলা-ট্র্যাক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক একরামুল হকের মতে “আমি প্রবাসী, এক অত্যন্ত কার্যকর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যা একটি অ্যাপ এবং ওয়েব পোর্টাল, যা বিদেশে চাকরির জন্য আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিপূর্ণ সেবা প্রদান করে থাকবে, বিএমইটি রেজিস্ট্রেশনে সহযোগিতা করে সরকারি ডাটাবেইসকে পরিপূর্ণ রূপরেখায় নিয়ে আসবে এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত তথ্য সহায়তা প্রদান এর মাধ্যমে অভিবাসীদের উপকৃত করবে।”

বর্তমান কভিড প্রেক্ষাপটে আমাদের রেমিট্যান্সের ধারা ঊর্ধ্বগামী রাখতে হলে আমাদের কার্যপ্রণালীকে ডিজিটাল প্রসেসে পরিচালিত করতে হবে, বিধায় সবাই আশাবাদী, আমি প্রবাসী অ্যাপ এই ক্ষেত্রে এক কার্যকরী ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। অ্যাপটি প্লে স্টোরে ডাউনলোডের জন্য পাওয়া যাবে। http://www.amiprobashi.com/a

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে আইফেল টাওয়ার
Next post কমিউনিটির উন্নয়নে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকা বাঞ্চনীয়
Close