নিজেদের উদ্ভাবিত র্যাপিড টেস্টিং অ্যান্টিবডি কিটের উন্নয়ন নিবন্ধন বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে রোববার বৈঠক করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। বৈঠকে ঔষধ প্রশাসন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি কিটের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তবে বিদ্যমান সরকারি নিয়ম মেনে আবারও কন্ট্রাক্ট রিসার্চ ফার্মের (সিআরও) মাধ্যমে গণস্বাস্থ্যকে অ্যান্টিবডি কিটের সক্ষমতা যাচাই করতে বলেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বৈঠক শেষে কোভিড-১৯ র্যাপিড ডট ব্লট প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আমরা আমাদের কিটের ব্যাপারে যথেষ্ট পজিটিভ দেখেছি। ফলে অ্যান্টিবডি কিটের অনুমোদন বিষয়ে আমরা পজিটিভ। অধিদপ্তরের ডিজিডিএ আমাদের কথা পজিটিভলি শুনেছেন।’
ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার আরও বলেন, ‘এন্টিবডি কিটের বিষয়ে আমাদের ইন্টারনাল ভেলিডেশান রিপোর্টকে আমলে এনে নিবন্ধনের অনুরোধ করেছিলাম, ডিজিডিএ বিদ্যমান সরকারি নিয়মে আবার সিআরও (থার্ডপার্টি) এর মাধ্যমে ইউএস এফডিএ আমব্রেলা গাইডলাইনস্ এক্সটারনাল ভেলিডেশান করতে বলেছেন। এর জন্য আমাদের আবেদিত রিয়েজেন্টের জন্য এনওসি দিয়ে দিবেন। এন্টিজেনের নীতিমালা আগামী বুধবার ফাইনাল হবে। একটা ফরমেট পাঠাবেন। সেই অনুযায়ী প্রটোকল আপডেট করে জমা দিতে বলেছেন।’
ঔষধ প্রশাসনের সঙ্গে এই বৈঠকে আরও ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক দলের প্রধান ড. বিজন কুমার শীল ও গবেষক দলের সদস্য নিহাদ আদনান।
সম্প্রতি, কিটের কার্যকারিতার ব্যাপারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এফডিএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা আমাদের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছি,এর সংবেদনশীলতা বিএসএমএমইউ যা বলেছে, তার চেয়ে বেশি আছে। এখন সব মিলিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা কী হবে, কীভাবে সেটা নেওয়া যায়, এ ব্যাপারে তাদের (ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর) সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে নিজেদের উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এতে দেখা গেছে, কিটটির সংবেদনশীলতা (সেনসিটিভিটি) ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা (স্পেসিফিসিটি) ৯৬ শতাংশ। অথচ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরীক্ষায় কিটটির সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা পাওয়া গিয়েছিল ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা ৯৬ শতাংশ।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছিল, এফডিএ’র আমব্রেলা গাইডলাইনের আলোকে কিটের সর্বনিম্ন সংবেদনশীলতা ৯০ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা ৯৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘অ্যান্টিবডি কিটটির আমরা আরও উন্নয়ন করেছি। আমরা ইন্টারনালভাবে পরীক্ষা করেছি। তা আজ ঔষধ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরে নিবন্ধন চেয়েছিলাম। তারা বলেছে,এটা সিআরও এর মাধ্যমে পরীক্ষা হতে হবে। আমরা এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সঙ্গে কথা বলব।’
তিনি বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি কিটের সংবেদনশীলতার মাত্রা এর ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা ৯০ শতাংশের কম হওয়ায় এটির অনুমোদন দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে পরবর্তীতে কিটটির উন্নয়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন।’
গত ২৫ জুন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রথমবারের মতো সফল অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট পরীক্ষার জন্য দুটি গাইডলাইন বা নীতিমালা অনুসরণের কথা গণস্বাস্থ্যের কাছে উল্লেখ করেছে। এর একটি হলো মার্কিন কেন্দ্রীয় ওষুধ সংস্থা এফডিএ (ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) নির্ধারিত নীতিমালা, অন্যটি হলো আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড (মান)/গাইডলাইন (নীতিমালা)। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং লাইসেন্সিং অথরিটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান গণস্বাস্থ্যকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখিত নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে না পারার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটটির নিবন্ধন দেওয়া সম্ভব হলো না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জেনারেল মাহবুবুর রহমান তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘তবে পরবর্তী সময়ে এই কিটটির উন্নয়নের বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’
কোভিড-১৯ র্যাপিড ডট ব্লট প্রকল্পের সমন্বয়কারী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের উদ্ভাবক দলের প্রধান গবেষক ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আমাদের নতুন যে গাইডলাইন দিয়েছে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি অসুবিধা হবে না। আমরা শতভাগ আশাবাদী।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি কিটের মানোন্নয়নে সহযোগিতা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষক দল প্রস্তুত আছে বলে জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা। তবে এ জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নতুন করে সম্মতি লাগবে। ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘আমাদের সাথে বিএসএমএমইউ’র কারিগরি কমিটির সাথে কথা হয়েছে। তারা আমাদের কিটের মানোন্নয়নে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আমাদের এনওসি দিয়ে দেবেন।’
More Stories
আনন্দবাজারের রিপোর্ট: নব্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি, নেতৃত্বে থাকবেন না শেখ হাসিনা?
নতুন কৌশল। আওয়ামী লীগ থাকবে, নেতৃত্বে শেখ হাসিনা থাকবেন না। তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নেতারাও বাদ যাবেন। আওয়ামী লীগের পরিচিত...
যে যাই বলুক নির্বাচন জুন অতিক্রম করবে না: আইন উপদেষ্টা
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত...
প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া বিএনপির চিঠিতে কী আছে
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি চিঠি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়...
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস
২০২৫ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ জন শীর্ষ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ...
কবি রফিক আজাদের বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনায় যা বলছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ
‘ভাত দে হারামজাদা/তা না হলে মানচিত্র খাবো’- জনপ্রিয় এই পঙক্তির স্রষ্টা, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত কবি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত...
লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় গিয়েছিলেন জামায়াত আমির!
জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনে সাক্ষাৎ হয়েছে। তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে তা...