ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ ১৫ মাসের নজিরবিহীন হামলা ও বর্বরতার পর অবশেষে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস থেকে জানানো হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুমোদনের সুপারিশ করেছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই চুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
আগামী রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে প্রথম দফায় বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়াও শুরু হবে। খবর রয়টার্সের
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত থেমে যাবে। এরই মধ্যে গাজার অনেক অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল এবং ৪৬ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া, ২৩ লাখেরও বেশি মানুষের ঘরছাড়া হওয়ার মতো মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তির প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে। যার মধ্যে নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষরা অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, ইসরায়েল প্রথম ধাপে কারাগারে আটক সমস্ত ফিলিস্তিনি নারী ও ১৯ বছরের কম বয়সী শিশুদের মুক্তি দেবে। বন্দিদের সংখ্যা ৯৯০ থেকে ১,৬৫০-এর মধ্যে হতে পারে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চুক্তির শর্তাবলি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করা হয়েছে। তবে, চুক্তির অনুমোদন নিয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে। নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে চুক্তি অনুমোদন হলে তিনি পদত্যাগ করবেন, যদিও তিনি সরকার ভাঙার হুমকি দেননি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই চুক্তির আওতায় গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক পর্যন্ত ত্রাণ সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৫১টি ট্রাক প্রবেশ করছে।
এই যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি সফল হলে তা কেবল সংঘাত থামাবে না, বরং মানবিক সাহায্যের মাধ্যমে গাজার পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় আড়াই শ জনের বেশি মানুষকে। তাঁদের মধ্যে অনেককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গাজায় হামাসের কাছে এখনো ৯৮ জন জিম্মি জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় রয়েছেন।
হামাসের ওই হামলার দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার আকাশ, স্থল ও জলপথে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ২৩ লাখ মানুষ।
More Stories
সৌদিতে সাত দিনে ২২ হাজারের বেশি অভিবাসী আটক
সৌদি আরবে আবাসন ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে চলা অভিযানে এক সপ্তাহে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটি।...
ওমরাহতে যাওয়ার আগে রিটার্ন টিকিট বাধ্যতামূলক করলো সৌদি
এখন থেকে সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গেলে রিটার্ন টিকিট কাটতে হবে ও যাত্রার সময় চেক-ইন কাউন্টারে ফিরতি টিকিট দেখানো বাধ্যতামূলক...
হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিচার নিয়ে যা বললেন ভলকার তুর্ক
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা...
হাসিনার দশা হলো মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের
আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছে ফরাসি রেডিও আরএফআই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল...
বিজ্ঞানের ‘সমতার শক্তিতে’ ফিলিস্তিনি শরণার্থী থেকে নোবেল জয়
জর্দানে ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারের সন্তান হিসেবে একদমই সাধারণ পরিবেশে জন্ম নেওয়া রসায়নে নোবেল বিজয়ী ওমর এম ইয়াগি বুধবার বিজ্ঞানের ‘সমতার...
স্ত্রীর চিৎকারে ভেবেছিলেন ভালুক, পরে শোনেন নোবেল জিতেছেন
মন্টানার রকি পর্বতমালায় ক্যাম্পিং ও হাইকিং করছিলেন প্রফেসর ফ্রেড র্যামসডেল। হঠাৎ স্ত্রীর চিৎকার শুনে ভাবেন, হয়তো ভালুক এসেছে। কিন্তু পরে...
