Read Time:6 Minute, 30 Second

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে গণহত্যা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। চার জিম্মিকে উদ্ধারে শনিবার গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এ শিবিরে ব্যাপক হামলা চালিয়ে অন্তত ২১০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। আহত হয়েছেন চার শতাধিক।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস নিজেদের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। আহতদের শরণার্থী ক্যাম্পটির আল আওদা এবং দেইর এল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে গাজার মিডিয়া অফিস।

এদিন যে চার জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের গত ৭ অক্টোবর একটি গানের অনুষ্ঠান থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, জিম্মিদের উদ্ধারের সময় নুসেইরাতে জল, স্থল ও আকাশ তিন দিক থেকেই হামলা চালানো হয়।

হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ৯ মাস যুদ্ধ করার পর চার জিম্মিকে উদ্ধার করার বিষয়টি ইসরায়েলের জন্য একটি পরাজয়।

এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় আগ্রাসনের পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হচ্ছে ইসরায়েল। এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং জেনারেলরা গোপনে গাজা যুদ্ধের অবসান চান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির হারেৎজ পত্রিকা।

এজন্য নেতানিয়াহু সব সময় যতটা সম্ভব বিকল্প রাখতে চান। তিনি উপসংহারে পৌঁছেছেন, যুদ্ধ শেষ করার জন্য তাঁর একটি বিকল্প দরকার। কিন্তু যুদ্ধ থামানোর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য তাঁর জেনারেলদের থেকে ভিন্ন বলে পত্রিকাটি জানায়।

এ অবস্থায় অস্ত্রবিরতির জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করেছে ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে, জাতিসংঘে এবং তার বাইরেও বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলি এবং হামাস নেতাদের প্রস্তাবিত অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে রাজি করানোর জন্য এযাবৎকালের সবচেয়ে জোরদার কূটনৈতিক চাপ দিচ্ছে। তবে মার্কিন চাপের এক সপ্তাহ পরও এখনও বিশ্ব আশার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে না।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং হামাস নেতাদের যুদ্ধবিরতিতে রাজি করতে বাইডেন গত ৩১ মে তিন ধাপবিশিষ্ট একটি প্রস্তাব দেন। এটি এখন মার্কিন কূটনীতির পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।

মার্কিন কূটনীতিকরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন চীন ও রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছে। যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য গাজায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে অষ্টম দফায় সফরের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছেন বাইডেন।

তবে মার্কিন প্রচেষ্টা ইসরায়েলের রাজনৈতিক সমীকরণ পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোটের অংশীদাররা হুমকি দিয়েছেন, বাইডেনের রূপরেখা নেতানিয়াহু গ্রহণ করলে সরকারের পতন ঘটাবেন তারা। শনিবারই ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গানৎজের পদত্যাগের কথা।

হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসামা হামদান এ সপ্তাহে বৈরুতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাইডেনের ঘোষণা ‘ইতিবাচক’; কিন্তু স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, বন্দি বিনিময়ের গ্যারান্টি ছাড়া তারা কোনো চুক্তি মেনে নেবেন না।

এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শিশুর বিরুদ্ধে যারা সহিংসতা ঘটানোর জন্য দায়ী, সেই তালিকায় ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। শিশু ও সশস্ত্র সংঘাত নিয়ে গুতেরেসের ১৪ জুন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে, তাতে এ তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গাজার সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার শিশু নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে শনিবার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মধ্য গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক পরিবারের ছয় সদস্য নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে অন্তত ৩৬ হাজার ৮০১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৩ হাজার ৬৮০ জন আহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post রোববার সন্ধ্যায় মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
Next post বিরোধীদলীয় নেতা মনোনীত রাহুল গান্ধী
Close