সোমবার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থার বৈঠকে প্রস্তাবটি ভোটের জন্য তোলার পর পরিষদের সব সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল। তবে প্রস্তাবটির বিপক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন বা ভেটো প্রদান করেনি দেশটি।
প্রসঙ্গত, এর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যত প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে—প্রায় প্রত্যেকটিতেই আপত্তি বা ভেটো দিয়েছে ইসরায়েলের সবচেয়ে পুরনো ও পরিক্ষীত মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণেই আর আলোর মুখ দেখেনি সেসব রেজোল্যুশন।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অভিযান নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দিন দিন অসন্তোষ বাড়ছে। সোমবারের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো না দেওয়াকে সেই টানাপোড়েনেরই প্রতিফলন বলছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি পাসের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেই বার্তায় পাস হওয়া প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে গাজায় জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি এবং সব জিম্মির নিঃশর্ত মুক্তির প্রস্তাব পাস হলো। প্রস্তাবটি যত শিগগির সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার ব্যত্যয় হলে তা হবে ক্ষমার অযোগ্য।’
গত ৭ অক্টোবর উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় হামাসের প্রায় ১ হাজার যোদ্ধা। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েরের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফের গত ৬ মাসের অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৪ হাজার। এছাড়া বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি, গাজা উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি ভবন ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিতহ হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন মানুষ। হামলার সময় এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরেও নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।
৭ অক্টোবরের হামলার ৯ দিন পর, ১৬ অক্টোবর প্রথম নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি তুলেছিল রাশিয়া, কিন্তু তাতে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। পরে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য দেশের উদ্যোগে আরও বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তোলা হয় পরিষদের বৈঠকে কিন্তু প্রতিবারই ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত নভেম্বরের শেষ দিকে অবশ্য তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের তৎপরতায় ৭ দিনের অস্থায়ী বিরতিতে সম্মত হয়েছিল হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। সেই বিরতির সময় মোট ১০৮ জন জিম্মিকে ছেড়ে দিয়েছিল হামাস, বিপরীতে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৫০ জনকে ছেড়ে দিয়েছিল ইসরায়েলও।
হামাসের হাতে এখনও জিম্মি অবস্থায় রয়েছে ১৩২ জন। অন্যদিকে ত্রাণ ও খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে গাজায়। চলমান এই পরিস্থিতির মধ্যেই কিছুদিন আগে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বড় আকারের অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু এই ঘোষণা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নিরাপত্তা পরিষদে পাস হলো গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব।
More Stories
জনসমক্ষে দায়িত্বে ফিরছেন রাজা চার্লস
ব্রিটেনের রাজা চার্লসের ক্যানসার ধরা পড়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। তখন থেকেই তিনি জনসমক্ষে সব ধরনের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত ছিলেন। তবে...
গাজা উপকূলে অস্থায়ী বন্দর তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী মার্কিন সেনাবাহিনী গাজা উপকূলে অস্থায়ী বন্দর তৈরির কাজ শুরু করেছে। মে মাসেই সেখান থেকে মানবিক...
৭৫ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড বৃষ্টিতে দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা
ভারী বৃষ্টি ও তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলোর অন্যতম দুবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত দুবাই বিমানবন্দর...
ইসরায়েল নিজেই তার সিদ্ধান্ত নেবে: নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে বলেছেন, ইরানের হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে ইসরায়েল ‘নিজেই তার সেই সিদ্ধান্ত’...
ইরানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানালো ইসরায়েলি বাহিনী
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকেও হামলা চালানো হয়েছে। হামলার...
ইসরায়েলে হামলা নিয়ে যা বললেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অতিসম্প্রতি ইসরায়েলে যে ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী, সেই হামলা ছিল ‘সংক্ষিপ্ত’ এবং এতে শুধু সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।...