মহান ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এক আলোচনা সভায় বলেন, ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষা আন্দোলন ছিল না। সেটি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনাপর্ব। ভাষা আন্দোলনের চেতনাই কিন্তু পরবর্তীতে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিতে প্রেরণা জুগিয়েছে। আজ দেশে গণতন্ত্র নেই, কথা বলা ও লেখার স্বাধীনতা নেই। জনগণের ভোটাধিকার নেই। ফলে বিএনপির একদফার যে আন্দোলন তা চলবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়নে যা করেছেন তা বলে শেষ হবে না। তিনি দেশের কৃষির উন্নয়নে খালখনন কর্মসূচি করেছেন। শিক্ষার উন্নয়নে অসংখ্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। একটি ছোট দেশ হয়েও তিনি নিজের পায়ের ওপর দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি আমাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। তার শাসনামলে যে নির্বাচন হয়েছিল সেখানে সব দল অংশ নিয়েছিল।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কত সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করেছিলেন। কোনো বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বন্দি করে কারাগারে পাঠাননি। ইনশাআল্লাহ আবারও তার নেতৃত্বে বিএনপি সফল হবে। তার যোগ্য পুত্র তারেক রহমান দলের হাল ধরেছেন। আজ তিনি দেশে আসতে পারছেন না। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ফিরবেন। বিএনপি মানেই শান্তি ও গণতন্ত্র। বিএনপি মানেই সাধারণ মানুষের উন্নতি ও সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধম্যেই কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটে। তার আগে মাতৃভাষার চেতনাকে কেন্দ্র করেই ৬৯, ৭০ পর্যন্ত এসেছিলাম। আমরা পাকিস্তানিদের বলেছিলাম তোমাদের বৈষম্যের শাসন মানি না। সেদিন বাঙালি তাদের ব্যালটের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের বুঝিয়ে দিয়েছিল তোমাদের চায় না। ফলে পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকারের ভরাডুবি হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনি তো চূড়ান্ত ঘোষণা দেননি। ফলে নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দিলে জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের কাছে দিশারী, অসময়ের কান্ডারি। তিনি হানাদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এ কথা যারা অস্বীকার করে তারা কাপুরুষ, অথবা স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের কোনো অবদান নেই। আজ হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরছে নানা স্মৃতিচিহ্ন আবিষ্কারের দ্বারা।
গয়েশ্বর বলেন, আজ শেখ হাসিনার বদৌলতে ঘরে ঘরে শহীদ মিনার হওয়ার দশা। যদি গুম-খুনের হিসাব করেন, ৭৫ সালের দুর্ভিক্ষের হিসাব করেন, তাহলে দেখা যাবে ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আজও যদি হিসাব করেন যারা স্বাধীনতা রক্ষার দাবিদার তাদের হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন দলের লক্ষাধিক নেতাকর্মী নিহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত হয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে লক্ষাধিক শহীদ মিনার উপহার দিয়েছেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেটি আজ ভূলুণ্ঠিত। এই সরকার ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আমরা এই দুটি ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করছি।
সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের সব অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সেই সঙ্গে একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করা হয়েছিল। সেই আন্দোলন আমাদের আজও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জোগায়। সেদিন পাকিস্তানিদের অপশাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজসহ সাধারণ মানুষ বিদ্রোহ করেছিল।
তিনি বলেন, আজকে ছাত্রসমাজের কী করুণ দশা। প্রতিদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা নারীদের লাঞ্ছিত ও সম্ভ্রহানি করছে। তারা দখলদারি কায়েম করেছে। তারা নদী দখল, ভূমি দখলসহ সবকিছু দখলের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে। শুধু ইট-কাঠ দিয়ে উন্নয়ন হয় না। এখানে কথা বলা ও লেখার কোনো স্বাধীনতা নেই। পেঁয়াজ ও রসুনের উৎপাদন বাড়লেও দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। ক্ষমতাসীনদের চাঁদাবাজির কারণে সব পণ্যের দাম বেড়েছে।
আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এই দেশের মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের দাবি আদায় করেছিল। তার উদাহরণ ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা আন্দোলন। সেসময় বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই সংগ্রাম করেছে। কখনও জয়ী বা পরাজিত হয়েছে। আজ আমরা একদফা দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। লড়াই হচ্ছে সহজাত প্রবৃত্তি। দেশের মানুষ আজ অসহায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ছাত্র-যুবক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে এবং এই সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা ঘরে ফিরবো। বাঙালি জাতিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুকসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সংগঠনের নেতারা।
এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জেড মোর্তুজা চৌধুরী তুলা, অঙ্গ সংগঠনের হেলেন জেরিন খান, মো. আব্দুর রহিম, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, শাহ মো. নেছারুল হক, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, কাজী মো. সেলিম রেজা, তানজিল হাসানসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভার আগে ভাষা আন্দোলনের শহীদ ও চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
More Stories
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক
যুক্তরাজ্যের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির নেতারা। ঢাকায় যুক্তরাজ্য হাইকমিশনানের বাসভবনে...
যতক্ষণ দেশবাসী পাশে আছে, কাউকে পরোয়া করি না: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার একটা শক্তি হচ্ছে জনগণ। তাদের শক্তি নিয়েই আমি চলি। একটা আস্থা...
সীমান্ত হত্যা : ভারতের কাছে বাংলাদেশের উদ্বেগ
সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ‘প্রাণঘাতী’ নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারের ওপর...
মার্কিন পুলিশের বর্বর আচরণ বিষয়ে বক্তব্য জানার আগ্রহ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিক্ষোভ দমনে পুলিশের বর্বর আচরণ নিয়ে দেশটির বক্তব্য জানার প্রবল আগ্রহ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের। বুধবার...
ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় ভোট কম পড়েছে: সিইসি
বৃষ্টি ও ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান...
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতিতে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে।...