Read Time:6 Minute, 7 Second

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিরোধী দলের সদস্যদের আপত্তির পরও কণ্ঠভোটে জাতীয় সংসদে পাস হয় বিলটি। তবে বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন।

মঙ্গলবার (৪ জুলাই) জাতীয় সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিল, ২০২৩ পাসের জন্য সংসদে উপস্থাপন করলে এর ওপর আনা সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরপিও সংশোধনের বিলটি আনা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিলটি আনা হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে বিলটির উদ্দেশ্য হয়তো মহৎ, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইন হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে, ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে। প্রত্যেকটা জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনরা আরপিওর কিছু সংশোধন করে। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য আরপিও সংশোধনের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলো নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

তিনি আরও বলেন, মানুষের প্রত্যাশা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন। বর্তমান সরকারের সময় নির্বাচন ব্যবস্থাকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে, মানুষ আজ নির্বাচন-বিমুখ হয়ে পড়েছে, মানুষ আজ ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না।

মোকাব্বির খান বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য যারা আজ সরকার উৎখাতের আন্দোলন করছে তারা কম দায়ী নয়। তাদের সময়ও তারা ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য ১ কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটারের তালিকা করেছিল। ফল হিসেবে একপর্যায়ে ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চান, আর যারা ক্ষমতা থেকে একবার বিতাড়িত হয়েছেন, তারা ক্ষমতাসীনদের উৎখাত করে ক্ষমতায় আসতে চান। সংবিধানে বলা আছে- জনগণ ক্ষমতার মালিক, জনগণকে কীভাবে ক্ষমতার মালিকে পরিণত করা হবে, জনগণের অধিকার কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণ কীভাবে তার ভোটের অধিকারের নিশ্চয়তা পাবে, কীভাবে নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে মানুষ ভোটের অধিকারের নিশ্চয়তা পাবে, এই বিষয়ে কোনো সরকারই কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার চায়। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এবং দলীয় প্রশাসন, দলীয়করণ এইগুলো থেকে অব্যাহতি চায়।

জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, ৫২ বছর পরে আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন করতে পেরেছি। আমরা চাই নির্বাচন কমিশন যেন ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু তাদের হাতে যদি কোনো ক্ষমতা না থাকে তাহলে তারা শুধু বসে বসে কী দেখবে?

এমপি পীর ফজলুর রহমান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে সকলেই সংশয়ে। নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। আবার গণমাধ্যম কর্মীদের বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিরও ব্যবস্থা আছে। তবে ঋণ খেলাপিদের একদিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধ, আর ইসির সব কেন্দ্রের ভোট বাতিলের পরিবর্তে শুধু অনিয়মজনিত কেন্দ্রের ভোট বাতিল করার ক্ষমতা দিয়ে বিলটি আনায় ইসির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হলো।

স্বতন্ত্র এমপি রেজাউল করীম বাবলু বলেন, বিলটি এমনভাবে এসেছে যে এখানে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করে দলীয়করণের আওয়ায় নির্বাচন করার প্রক্রিয়া প্রতীয়মান হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে- যাইহোক তাল গাছটি আমার।

এসব সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যে সংশোধনীটা আনা হয়েছে- সেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন একটা সংসদীয় আসনের পুরো নির্বাচন প্রায় ১৪০টির মতো কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করতে পারবে না, যেগুলোতে অনিয়ম হয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে পারবে। আর পুরোটাই বন্ধ করলে তা হলো অসাংবিধানিক।

তিনি আরও বলেন, ঋণ খেলাপিরাও ভোটে অংশ নিতে চান, তাদের সুযোগ দিতে এবং খেলাপি অর্থ কোষাগারে আনতে আমরা বলেছি মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগের দিন অর্থ জমা দিলে খেলাপি তকমা থাকবে না। এর ফলে ঋণ আদায় বেড়ে যাবে। আর ওনারাও ভোটে অংশ নিতে পারবেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে
Next post বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসবাদকে বিবেচনায় নিতে বাইডেনের প্রতি ১৭ নাগরিকের আহ্বান
Close