ফিরোজ আলম :
একটা জাতি তখনই উন্নত বা সভ্য জাতি হিসাবে স্বীকৃত পায়,যখন অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে সাহিত্য সংস্কৃতি ও চিন্তা জগৎ উন্নত হয়। সমাজের সব শ্রেণী পেশার মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়।
সভ্য সমাজে পুলিশ জনগণের বন্ধু,পশ্চাদপদ সমাজে পুলিশ একটি আতংকের নাম । আমাদের দেশে পুলিশ এখণো জনগণের বন্ধু হতে পারেনি। সাধারণ মানুষ পুলিশের সংস্পর্শে যেতে ভয় পায়। যদিও পুলিশ বাহিনীতে এখন অনেক সুশিক্ষিত সৎ ও চৌকষ অফিসারের উপস্তিতি রয়েছে। ছাত্রজীবনে পুলিশকে গালি দিতো এমন অনেকেই এখন পুলিশের বড় কর্তা। তারা ছাত্র জীবনে পুলিশের কাছে যেমন ব্যবহার প্রত্যাশা করত,তাদের কাছে অনুরূপ প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।
রাতের বেলা চেকপোস্টে সিএনজির এক মহিলা যাত্রীর সাথে পুলিশের আচরণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি প্রথম অংশ দেওয়া হয়নি। ধারণা করছি পুলিশ মেয়েটির সাথে ফ্লাটারিং করার চেষ্টা করেছে,সেই কারণে মেয়েটি হয়ত একটু বেশি উত্তেজিত ছিল । কিন্তু পুলিশের ভাষা মোটেও প্রত্যাশিত ছিলনা। রাতের বেলা মেয়েরা একা চললেই আমরা তাকে খারাপ ধরে নেয়,পুলিশও এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি । এটা সামাজিক বাস্তবতা । সভ্য সমাজে একটি পতিতারও অধিকার আছে । বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে কোথাও লেখা নেই রাতের বেলা মেয়েরা একা চলতে পারবেনা । সেখেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একটি মেয়ের একা চলা নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য ।
এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা মনে পড়ছে,সম্ভবত ১৯৮৭ -৮৮ সনের কথা । এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে খুলনায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের একটি মশাল মিছিল খুলনার নির্মানাধীন সোনালী ব্যাংকের মূল ভববের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল । হঠাৎ মিছিলের সামনে একটি মেয়ে এসে দাঁড়িয়ে মিছিল থামাতে অনুরোধ করল । মেয়েটি বলল,” আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী,পাশের পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা আমাকে খারাপ মেয়ে ভেবে টেনে হিচড়ে ভিতরে নিতে চেয়েছে । “ তাছাড়া রেট কত …ভাব মারিসনা…ইত্যাদি বাক্যবানে তাকে জর্জরিত করেছে ।
মিছিল উত্তেজিত হয়ে পুলিশ ক্যাম্প ঘিরে ফেলল । আমিও ঐ মিছিলের একজন । কেউ কেউ ভবনে আগুন দেবার চেষ্টা করল । ইতিমধ্যে পুলিশের বড়কর্তারা এসে ক্ষমা চেয়ে উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিল ।
সময় গড়িয়েছে অনেক….কিন্তু দুইযুগের ব্যবধানে আমাদের সামাজিক মানবিক মূল্যেবোধের পরিবর্তন হয়েছে সামান্যই । পুলিশ বাহিনীর যেকোনো ভাল কাজে আমরা আপ্লুত হই,আশা জাগে । যখন দেখি একজন বিদায়ী পুলিশ কর্মকর্তার জন্য জনগণ চোখের জল ফেলছে তখন গর্ববোধ করি । কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান যখন অপরাধীর চোখ তুলে নেবার হুমকি দেয় তখন আইনের শাসন হাজার বছর পিছিয়ে পড়ে ।
ধন্যবাদ ডিএমপি’কে ঘটনা তদন্তে দ্রুত পদক্ষেপ নেবার । পুলিশ আচরণ বিধি সঠিক ভাবে পালিত হোক এমন প্রশিক্ষণ জোরদার হোক । সমাজের সব পেশার মানুষের চলা-ফেরার স্বাধীনতা সুনিশ্চিত হোক ।
More Stories
চাঁদের নিচে ‘তারা’, ফেসবুকে ছবি ভাইরাল
শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। গতকাল বৃহস্পতিবার খালি চোখে অধিকাংশ মানুষই চাঁদ দেখতে পারেননি। তবে আজ শুক্রবার খালি...
আমাদের প্রাণের পদ্মা সেতু
কাজী মোশাররফ হোসেন ‘এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদী তটে আমার রাখাল মন গান গেয়ে যায় এই আমার...
অবশেষে দীর্ঘ ১৩ বছর পর মনের আশা পূরণ
গত ১৯ নভেম্বর ২০২০, ৭০তম সভায় আমার গেজেট করণের দাবি চূড়ান্ত ভাবে অনুমোদিত হয়েছে। বিজয়ের মাসে এ এক দারুণ বিজয়।...
কেন এতো ধর্ষণ বাংলাদেশে?
ফিরোজ মাহবুব কামাল জ্বর কখনোই কোন সুস্থ্য দেহে আসে না। শরীরের উচ্চ তাপমাত্রাই বলে দেয় দেহে ম্যালেরিয়া, নিউমনিয়া, টাইফয়েড, কভিড...
সভ্য দেশে অসভ্যদের বসবাস : ভালো কাজেও বাহাত দেয়ার মানুষ আছে কমিউনিটিতে
কাজী মশহুরুল হুদা সভ্য দেশে বসবাস করেও ভালো কাজে বাহাত দেওয়ার মানুষ এই কমিউনিটিতে রয়েছে। আমি সম্প্রতিক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র...
বিতর্কে দুই ভাইস-প্রেসিডেন্ট
আনোয়ারুল মুকুল এবার মার্কিন উপ-রাষ্ট্রপতি মাইক পেন্স এবং তাঁর ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের মধ্যে হওয়া ভাইস-প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট ১২ ফিট ব্যবধান...