মুজিববর্ষ আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় অনুভূতির এক উৎসব। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে করছে এটা, আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় প্রাপ্তি ছিল। বছরজুড়ে এই অনুষ্ঠানের জন্য নানা পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে নানারকম উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এই কর্মসূচী নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে দুটো বিষয় সামনে চলে এসেছিল। প্রথমত; তিনি কি এই করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই মুজিববর্ষের সব অনুষ্ঠান এগিয়ে নিয়ে যাবেন? দ্বিতীয়ত; নাকি জনগণের কথা চিন্তা করে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান সংক্ষেপিত করবেন প্রধানমন্ত্রী?
মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান ছিল প্যারেড স্কয়ারে সমাবেশ। যেই সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আয়োজনগুলোর একটি ছিল। এই অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করতে পারতেন। কারণ করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন আক্রান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার সবচেয়ে বড় যে ঝুঁকি সেটা হলো, জনসমাগমের মধ্যে করোনা ছড়ায় বেশি।
প্রধানমন্ত্রীকে তার পরামর্শকরা জানিয়েছিলেন, জনসমাবেশ এড়িয়ে গেলে ভালো হয়। শেখ হাসিনা চাইলে ঝুঁকি নিতে পারতেন। ঝুঁকি নিয়ে তিনি মুজিববর্ষের সমাবেশটি করতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন, মুজিববর্ষের এই সমাবেশ নয়, তার চেয়ে জনগণের নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্যই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটাই একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং জনবান্ধব নেতার সবচেয়ে বড় গুণ।
প্রধানমন্ত্রী জনগণের স্বার্থে মুজিববর্ষের মূল সমাবেশ করলেন না। আমরা বুঝতেই পারি, এই অনুষ্ঠানটি বাতিল করা আওয়ামী লীগের জন্য এবং শেখ হাসিনার জন্য কতটা হতাশার এবং কতটা দুঃখের। কারণ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা নির্মমভাবে হত্যার পর সারাদেশে তিনি প্রায় নিষিদ্ধ ছিলেন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। খুনিদেরকে বিভিন্ন কূটনীতিক পদে নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশে আইনের শাসনের পথ চিরতরে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের আওতায় আনে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কাজেই মুজিববর্ষ উদযাপন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়। এর সঙ্গে এক ধরনের আবেগ জড়িয়ে আছে। সেই আবেগকে ছাইচাপা দিয়ে জনগণের জন্য মূল অনুষ্ঠান স্থগিত করা বোধহয় একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব।
শেখ হাসিনা এটা দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই তিনি হাঁটছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন জনগণের জন্য সবকিছু উৎসর্গ করেছিলেন। ঠিক তেমনি শেখ হাসিনা জনগণের মঙ্গলের জন্য মুজিববর্ষের এই উৎসবটা স্থগিত করলেন। সাদামাটা চোখে এটা একটা উৎসব আয়োজন। কিন্তু আমরা যদি গভীর রাজনৈতিক বিশ্লেষণের চোখে দেখি তাহলে শেখ হাসিনার এটা একটা বড় ত্যাগ স্বীকার। এই ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন বলেই তিনি নিজেকে মহান নেতার উচ্চতায় উপস্থাপিত করতে পেরেছেন। সূত্র: বাংলা ইনসাইড।
More Stories
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...
বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস
ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে সেগুলোর বিচার শেষে দলটিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে বলে...
সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া
ছয় বছর পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল হাস্যাজ্জ্বল খালেদা জিয়াকে। সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে...
শেখ হাসিনাকে ফেরানোর নির্দেশনা নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে দুই দেশের বৈঠকে আলোচনার সুযোগ...
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বললেন উপদেষ্টা মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ...