Read Time:5 Minute, 40 Second

চীনা ঋণের সুদের হার ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। অপরদিকে, চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ—জিডিআই, জিএসআই এবং জিসিআই-তে যোগদানে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে দেশটি।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন চীনকে প্রেফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং সরকারি কনসেশনাল ঋণ (জিসিএল) উভয় ক্ষেত্রেই সুদের হার ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০ থেকে ৩০ বছর করার অনুরোধ জানান তিনি।

বৈঠকে ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের ভালো রেকর্ডের প্রশংসা করে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হন এবং সুদের হার কমানোর অনুরোধটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। তিনি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর তিন বছর ধরে চীনা বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের কোটা ফ্রি প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশের অনুরোধে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য কুনমিংয়ে ৩ থেকে ৪টি স্বীকৃত হাসপাতালকে বিশেষায়িত করার চীনের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ঢাকায় একটি বিশেষায়িত চীনা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বাংলাদেশের প্রস্তাবকেও তিনি স্বাগত জানান। শিক্ষা, রেলপথ, কৃষি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পশুসম্পদ, মৎস্য, জাহাজ ভাঙা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং নীল অর্থনীতির মতো খাতে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির সহযোগিতা এবং সহায়তার জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করার জন্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জানায় উভয় পক্ষ। বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান স্বীকার করে উভয় পক্ষ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে অব্যাহত সহযোগিতার ওপর জোর দেয়। তারা চীনা অর্থায়নে প্রস্তাবিত প্রকল্প যেমন দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার, মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ, ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন এবং ৪-জি সম্প্রসারণে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।

বৈঠকে উভয় নেতা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই সমস্যার টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরিতে কাজ করার জন্য তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য মিয়ানমারের সাথে চীনের অব্যাহত সম্পৃক্ততার আশ্বাস দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশকে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ—জিডিআই, জিএসআই এবং জিসিআই-তে যোগদানের কথা বিবেচনা করার অনুরোধও করেন। জবাবে বাংলাদেশ প্রস্তাবগুলি পরীক্ষা করার এবং বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনায় চীনের সাথে জড়িত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে। তারা জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক ফোরামে একে অপরের প্রার্থিতার বিষয়ে সহযোগিতা করতেও সম্মত হন।
উল্লেখ্য, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র আমন্ত্রণে সোমবার দেশটিতে সফরে যান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বেইজিং সফর শেষে সাংহাই যাবেন। তিন দিনের সফর শেষে আগামী ২৪ জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে ফিরবেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post আমেরিকায় নতুন সাম্রাজ্যবাদ: দ্য ইকোনমিস্ট
Close