দেশে গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসাপিয়ারেন্স)। এছাড়া হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেওয়া অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুসহ র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করা হয়েছে।
এদিকে গুমের ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গুমের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা কাজটি এমনভাবে করেছে, যাতে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। বিভিন্ন ফোর্স নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে এবং ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি আরও জানান, গুমের শিকার অনেকে এখনো শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। তাদের ওপর এতটাই ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছিল যে, তারা এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার সর্বশেষ বক্তব্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও সঠিক বিচারের আশ্বাস দেওয়ার পর রিপোর্টের সংখ্যা অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে কমিশনের সদস্যরা অধ্যাপক ইউনূসকে আয়নাঘর পরিদর্শনের অনুরোধ জানান। তারা বলেন, ‘আপনি আয়নাঘর পরিদর্শন করলে ভিক্টিমরা অভয় পেতে পারেন।’
প্রধান উপদেষ্টা তাদের এ অনুরোধে সম্মতি দিয়ে জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল যা আয়নাঘর নামে পরিচিতি পেয়েছে, সেগুলো দেখতে যাবেন। তিনি কমিশন সদস্যদের তাদের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং কাজটি এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তারা তিন মাস পর মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন। কাজটি শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
More Stories
গুমে ভারতীয় সম্পৃক্ততা মিলেছে: তদন্ত কমিশনের
আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুমের সঙ্গে ভারতীয় সম্পৃক্ততা পেয়েছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে যে প্রতিবেদন...
আইন উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করবেন মাহিন, সংহতি হাসনাতের
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করার দাবিতে আইন উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন...
আ. লীগ ও হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন নয় : নাগরিক কমিটি
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘খুনি হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আগামীতে...
অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ারি দিলেন আন্দালিব রহমান পার্থ
কোনো দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য নির্বাচন বিলম্বিত করলে আওয়ামী লীগ সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ...
আয়নাঘর দেখতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
আয়নাঘর দেখতে যাবেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি...
র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে গুম তদন্ত কমিশন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন...