বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে হাজার খানেকের মতো আমাদের কলিজার টুকরারা জীবন দিয়েছেন। এখানে কোনো দলমত নাই। এখানে কোনো ধর্ম নাই। এখানে সব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন, সব ধর্মের মানুষই নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। শহিদদের আমরা কোনো দলের সম্পত্তি বানাতে চাই না। এই শহিদরা জাতির সম্পদ, এই শহিদরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। এই শহিদরা আজীবন জাতীয় বীর। আমরা তাদের সেই মর্যাদায় দেখতে চাই। যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের নিয়ে কোনো দল যেন ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা না করি। এটা আমাদের সবার ত্যাগের ফসল। তাহলে সবার প্রতি সম্মান দেখানো হবে।
সোমবার বিকালে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের মাগফেরাত ও আহত ও শহিদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ, তিনি যেটা কালিমা হিসেবে জাতির কপালে লিখে দিতে চেয়েছিলেন। জাতি এটা তার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমন রাজনীতি করলেন, বললেন উন্নয়নের রাজপথে দেশকে উঠিয়ে দিয়েছেন। বললেন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এমন বানালেন, আর এমন রাজপথ তৈরি করলেন, গাড়িটা রাজপথ দিয়ে চালিয়ে আপনি যেতে পারলেন না। এমন রাজনীতি করলেন আপনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলো। সাড়ে ৮শ বছর আগে লক্ষণ সেন পালিয়ে গিয়েছিল, আর আপনি গেলেন তার পরে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়েছে। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মতো মানুষকে বলা হয়েছে তিনি ধর্ষক, তিনি খুনি, তিনি লুটেরা, তিনি অগ্নিসংযোগকারী। সময় বদলায়, পরিবেশ বদলায়। সত্যকে চাপা দিয়ে রাখা যায় না। সত্য মাটির নিচ থেকে উঠে আসে। এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর, নির্যাতন করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের উপর, নির্যাতন করা হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের ওপর, নির্যাতন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের উপর। হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক বন্ধুদের। কালো আইনে টেনে হিঁচড়ে নেওয়া হয়েছে তাদের জেলে। তারা কাউকে বাদ দেয়নি। সবাইকে নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ। সবাই রাজাকার।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের শাসনামল নিয়ে বলেন, ১৭ বছর ৬ মাস এ জাতি বন্দিত্বের নিকট বাঁধা ছিল। মুখে ছিল তালা, হাতে ছিল হ্যান্ডকাপ, পায়ে ছিল বেরি। এ দেশের ১৫ কোটি মানুষ ছিল মজলুম। রাস্তায় যে ভাই বা বোন ভিক্ষা করতেন তিনিও ছিলেন মজলুম। বিগত সরকারের সময় ভিক্ষুকদেরও চাঁদা দিতে হতো। প্রত্যেকটি মানুষই ছিল জুলুমের শিকার।
শফিকুর রহমান বলেন, শহিদ নিজামী বলেছিলেন- আমার রক্ত বাংলাদেশে কথা বলবে। আমার রক্ত বাংলাদেশের পরিবর্তনের সূচনা করবে। সাড়ে ১৫ বছর এরা জাতির উপর স্টিমরোলার চালিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের উপর। আমাদের মতো মজলুম সংগঠন আর কেউ না। আর কারো এতোগুলো নেতাকে হত্যা করা হয়নি। আর কারো বাড়ি ঘর বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়নি। আর কারো বাড়ি ঘরে আগুন ও লুটপাট করা হয়নি। আমাদের পর্দাশীল মা বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের নির্যাতন নিয়ে বলেন, যে সাংবাদিক ভাই বিদেশে বসে অন্যায়, জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন দেশের তার পরিবারের কোনো বোনকে টেনে নিয়ে টানা-হেঁচড়া করা হয়েছে। কোনো ভাই ফেসবুকে কিছু লিখলে, আজরাইল রূপী ডিবি তার ঘরে গিয়েছে। তাদের হেনস্থা করা হয়েছে।
আন্দোলনে আহতদের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, আহতদের তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করব। আমরা চেষ্টা করছি, যাদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, তাদেরকে একটু উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। দুই একটা দেশের সঙ্গে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি। তারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা যদি একটু এগিয়ে আসে, এই সমস্ত দুখী মানুষের বিরাট উপকার হবে। যারা এগিয়ে আসবেন, তাদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে আমরা কবুল করব।
জেলা জামায়াতে ইসলামের আমির আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।
এতে বক্তব্য রাখেন ধনবাড়ীর নিহত একরামুল হক সাজিদের পিতা জিয়াউল হক, সৈয়দা আক্তার, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী মনিরুল ইসলাম, জেলা শিবিরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মতিউল্লাহ, শহর শিবির সভাপতি মামুন আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
এ সময় বিভিন্ন উপজেলা জামায়াত ও শিবিরের ছয় সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
শেষে শহিদ আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. মো. শফিকুর রহমান।
More Stories
পুরোপুরি পুড়ে ছাই ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৈরি হওয়া দুটি প্রতীকী মোটিফে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকালে...
‘মার্চ ফর গাজা’য় অংশ নিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল
চারুকলায় নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ভাস্কর্যে আগুন দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তা এখনো শনাক্ত করতে...
বদলে গেছে বাংলাদেশ পুলিশের লোগো
বদলে গেছে বাংলাদেশ পুলিশের লোগো। পূর্বে লোগোতে থাকা পাল তোলা নৌকা নতুন লোগোতে বাদ পড়ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ পুলিশের...
বাংলা বর্ষবরণে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন
বাংলা বর্ষবরণে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর নতুন নাম করা হয়েছে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। এই নামে এবার বর্ষবরণের অনুষ্ঠান...
দেশে এতোদিন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ ছিল না: প্রধান উপদেষ্টা
বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দেশে আগে কখনো এত অনুকূল পরিবেশ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...
নাসার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি, মহাকাশ গবেষণায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা
বাংলাদেশ এখন ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’র ৫৪তম স্বাক্ষরকারী দেশ, যা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ ও অসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানকে উৎসাহিত...