Read Time:6 Minute, 44 Second

প্রবৃত্তির দাসত্ব, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষসহ মনের পশুত্বকে পরাভূত করার শিক্ষা নিয়ে আবারও এসেছে কোরবানির ঈদ। মহান আত্মত্যাগ, আত্মসমর্পণ এবং নিজেকে উৎসর্গ করার মহিমায় উদ্ভাসিত মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা আজ।

‘ঈদুজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ এল আবার দুসরা ঈদ! কোরবানী দে, কোরবানী দে, শোন খোদার ফরমান তাগিদ…’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কাব্যসুর আকাশ-বাতাস মন্দ্রিত করে মনপ্রাণ উজালা করে তুলছে ঈদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে। আল্লাহ তায়ালার প্রতি অপার আনুগত্য এবং তারই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এক ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এই অনন্য ঘটনার স্মরণে কোরবানি প্রচলিত হয়।

আরবি ‘কুরবান’ শব্দ থেকে কোরবানি। এর অর্থ—ত্যাগ, উৎসর্গ, বিসর্জন, নৈকট্যলাভ ইত্যাদি। পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট দিনে, নিদিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পশু জবেহ করাকে উযহিয়্যা বা কোরবানি বলে। স্বাধীন, বালেগ, বিত্তবান তথা মালেকে নেসাব, মুকিম, মুসলমানের পক্ষে তার নিজের কোরবানি করা ওয়াজিব। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে জবাই করা পশুর মাংস বা রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, কেবল আল্লাহভীতির পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে তার আদেশ পালন করার নিয়ত ছাড়া।

এ প্রসঙ্গে কুরআনের সুরা হজে বলা হয়েছে—‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না সেগুলোর গোশত এবং রক্ত, বরং তার কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া-পরহেজগারি বা আল্লাহভীতিই।’ ’ঈদুল আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা।’ মনের পশুরে কর জবাই পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই…’। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতির শিক্ষাই এ ঈদের আদর্শ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দ্বিধাহীনভাবে তার কাছে আত্মসমর্পণ এবং তার নির্দেশ শর্তহীনভাবে মেনে নেওয়াই হলো ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি করে সেই ত্যাগের কথাকেই স্মরণ করা হয়। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এ শ্রেণির প্রাণী দ্বারা কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিন, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া যায়। এদিকে ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব। ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ অর্থ: ‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।’ মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। ঈদুল ফিতরের মতো কোরবানির ঈদের তারিখ নিয়ে আনন্দময় অনিশ্চয়তা থাকে না। আট দিন আগেই পশ্চিম আকাশে জিলহজের চাঁদ জানান দিয়েছে কোরবানির বারতা। সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। সালাত ও আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির পরমানন্দ থেকেই উদযাপিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ছাড়াও ১১ ও ১২ তারিখ কোরবানি করা যায়। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনের সুরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে—‘অতএব আপনার পালন কর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’

প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত ৮টায়, তৃতীয়টি ৯টায়, চতুর্থটি সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post কোরবানি আত্মদান-আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে : রাষ্ট্রপতি
Next post সেন্টমার্টিন ইস্যুতে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত, বললেন মির্জা ফখরুল
Close