Read Time:5 Minute, 26 Second

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দুই দফায় কম ভোটার উপস্থিতি আর সরকারবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিন্দু ভোটারদের উজ্জীবিত করতে চাইছেন। এ জন্য তিনি নির্বাচনী সভা-সমাবেশে নজিরবিহীনভাবে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় প্রথম দফার চেয়েও কম ভোট পড়ায় মুসলিমবিরোধী সুর আরও চড়িয়েছেন। এভাবেই টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা নিশ্চিত করতে চান এই হিন্দুত্ববাদী নেতা।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তাঁর এই সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনের কৌশল আসলে কতটা কাজে দেবে, তা নিশ্চিত নয়। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের

নির্বাচনী প্রচারে বিরোধীদের আক্রমণ ও হিন্দু ভোটারদের কেন্দ্রে টানতে মোদি যেসব বিভেদমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, তা তাঁর গত ১০ বছরের ক্ষমতার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ।

গত ১৯ এপ্রিল নির্বাচন শুরুর পর একাধিক সমাবেশে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন মোদি। একই সঙ্গে বিরোধী কংগ্রেসকে পাকিস্তানপন্থি মুসলিম লীগের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

গত শনিবার গোয়ায় এক সমাবেশে মোদি বলেন, ‘কংগ্রেস (নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের) সম্পদ নিয়ে তা তাদের ভোট ব্যাংককে দিতে চায়।’ সমাবেশে উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করে মোদি বলেন, ‘আপনি জানেন, কংগ্রেসের প্রিয় ভোট ব্যাংক কে?’ এর সরাসরি জবাবও দেন তিনি। বলেন, ‘মুসলমানরা।’

ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অসীম আলী বলেছেন, ‘মোদি হিন্দুত্ববাদকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। আমি কোনো প্রধানমন্ত্রীকে এমন বক্তৃতা দিতে দেখিনি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কথা বলছেন, তৃণমূল পর্যায়ের বিজেপি কর্মীরা এখন অবাধে এর প্রয়োগ করতে পারবেন।

মুসলিম মোগল সম্রাটের নির্মিত তাজমহলকে ধারণকারী আগ্রায় বৃহস্পতিবার হাজারো সমর্থকের সমাবেশেও কংগ্রেসের ‘সংখ্যালঘু তোষণের’ ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন মোদি।

কংগ্রেস অবশ্য পাল্টা অভিযোগ তুলেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। দলটির নেতা ও মোদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাহুল গান্ধী গত শুক্রবার বলেন, মোদিকে ‘খুব ভীত’ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মোদি গরিবদের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিকদের দিয়েছেন। আমরা সেই টাকা ভারতের দরিদ্র মানুষকে ফিরিয়ে দেব।’

তবে এবারের নির্বাচনে বিজেপি কতটা আসন বাড়াতে পারবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দিহান। সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রনজয় সেন বলেছেন, ‘দলীয় ক্যাডারদের চাঙ্গা করতেই মোদি মূলত সাম্প্রদায়িক বক্তব্য বাড়িয়েছেন। তবে তা কতটা কাজ করবে, তা নিশ্চিত নয়।’

ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মুসলিমরা দায়ী– মোদির এমন বিতর্কিত মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন দলের প্রধান ও হায়দরাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। মোদিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘মুসলিমরা বেশি সন্তানের জন্ম দেয়– আপনি কেন এমন ভীতিপূর্ণ ধারণা তৈরি করছেন? আপনার সরকারের তথ্যই বলছে– জন্মহার ও জনসংখ্যার দিক থেকে মুসলিমরা পিছিয়ে আছে। মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি কনডম ব্যবহার করে। এটা বলার মধ্যে কোনো লজ্জা নেই।’

এদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা ভগবন্ত মান দাবি করেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইন্ডিয়া জোট প্রথম দুই ধাপে ভোটে মোট ১৯০ আসনের মধ্যে ১২০-১২৫টিতে জিতবে। একই সঙ্গে তাঁর দল আগামীতে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ট্রুডোর সামনেই খালিস্তানপন্থী‌ স্লোগান, কানাডার রাষ্ট্রদূতকে তলব ভারতের
Next post ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের কড়া বার্তা দিলেন বাইডেন
Close