Read Time:10 Minute, 2 Second

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে ভারতীয় প্রথম সারির বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে।

ভারতের নৌবাহিনীর রণতরী ও টহল বিমান অভিযান চালিয়ে এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করেছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির বেশ কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম।

তবে ভারতীয় নৌবাহিনীর এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের বিষয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমের দাবির সত্যতা বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের শিরোনামে এমভি আব্দুল্লাহকে ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছে বলে জানানো হলেও প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই দেয়া হয়নি।

এর আগে ভারতের নৌবাহিনীর এক মুখপাত্রের বরাতে সোমালিয়া উপকূলে ছিনতাইকৃত পণ্যবাহী একটি জাহাজের গতিরোধ করেছে দেশটির নৌবাহিনী বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর পর হঠাত করেই এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।

‘‘ছিনতাইকৃত বাংলাদেশের-পতাকাবাহী জাহাজ উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী/Navy rescues hijacked Bangladesh-flagged ship’’ শিরোনামে এমভি আব্দুল্লাহকে নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই শিরোনামের দাবির বিষয়ে তাদের প্রতিবেদনে বিস্তারিত কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।

ভারতের কয়েকটি আরো কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ‌‌‘‘ছিনতাইকৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী’’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এসব সংবাদমাধ্যমের তালিকায় আছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ভারতীয় বার্তা সংস্থা ইন্দো এশিয়া নিউজ সার্ভিস (আইএএনএস), ফার্স্ট পোস্ট, নিউজ ১৮-সহ দেশটির আরো কিছু সংবাদমাধ্যম।

বরং ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরে ছিনতাইয়ের শিকার বাংলাদেশি পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজকে জরুরি সহায়তার অনুরোধে সাড়া দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এই অঞ্চলে ভারতীয় নৌবাহিনীর এ ধরনের ধারাবাহিক অভিযানের সর্বশেষ ঘটনা এটা।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ভারতীয় নৌবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে জলদস্যুদের হানার ঘটনায় সাড়া দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর ওই রণতরী ও টহল বিমান। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর অবস্থান শনাক্ত করার পরপরই ভারতের নৌবাহিনী দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল বিমানটি মোতায়েন করে। ক্রুদের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টাও করেছিলো নৌবাহিনী।

সেই সময় এমভি আব্দুল্লাহ থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। সামুদ্রিক নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারত মহাসাগরের ওই অংশে আগে থেকেই রণতরী মোতায়েন রেখেছে ভারত। এমভি আব্দুল্লাহর ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রণতরীটি গতিপথ বদলে বাংলাদেশি জাহাজকে অনুসরণ করতে থাকে। এর এক পর্যায়ে ছিনতাইকৃত বাংলাদেশি এই বাণিজ্যিক জাহাজের পথ আটকায় তারা।

ভারতের নৌবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া এমভি আব্দুল্লাহর ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে পথ ছেড়ে দিয়ে সেটি সোমালিয়ার জলসীমায় পৌঁছানো পর্যন্ত কাছাকাছি অবস্থানে থেকে অনুসরণ করতে থাকে ভারতীয় রণতরী ও টহল বিমান।’’

দেশটির আরেক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেও ‘‘ছিনতাইকৃত বাংলাদেশের-পতাকাবাহী জাহাজ উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী’’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে। তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই শিরোনামে পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধিত প্রতিবেদনে ‌‌‌‌‘‘সোমালিয়ার কাছে বাংলাদেশি জাহাজে জলদস্যুদের হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী’’ শিরোনাম করেছে ইন্ডিয়া টুডে।

এতে বলা হয়েছে, সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ থেকে জরুরি সহায়তা চাওয়ার ঘটনায় সাড়া দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ২৩ জন ক্রুসহ জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। পরে ভারতীয় নৌবাহিনী জাহাজটি উদ্ধারের জন্য দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল বিমান (এলআরএমপি) মোতায়েন করে।

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্টও বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের খবর দিয়েছে। ‘‘সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের হামলা থেকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজকে রক্ষা করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী’’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এই সংবাদমাধ্যম। কিন্তু প্রতিবেদনে এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। বরং ইন্ডিয়া টুডে ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনটিই প্রায় অবিকল প্রকাশ করেছে ফার্স্ট পোস্ট।

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্টও বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের খবর দিয়েছে। যদিও এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও ‘‘এডেন উপসাগরে বাংলাদেশি জাহাজকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী’’ এই শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, এডেন উপসাগরে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সহায়তা চেয়ে করা অনুরোধে দ্রুত সাড়া দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ওপর জলদস্যুদের হামলার ঘটনায় সাড়া দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর মিশনের কাজে নিয়োজিত একটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি এলআরএমপি বিমান।

ভারতীয় নৌবাহিনীর বিবৃতির বরাত দিয়ে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ‘‘এলআরএমপি বিমানটি অনুরোধ পাওয়ার পরপর তাৎক্ষণিকভাবে মোতায়েন করা হয়। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলাদেশি জাহাজটির অবস্থান শনাক্ত করার পর ক্রুদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে ভারতের নৌবাহিনী। তবে বাংলাদেশি জাহাজ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এই প্রতিবেদনেও এমভি আব্দুল্লাহকে উদ্ধারের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। তবে শিরোনামে বাংলাদেশি জাহাজকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে দেশটির এই সংবাদমাধ্যম। এছাড়াও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইএন, হ্যান্স ইন্ডিয়া, নিউজ ১৮-সহ আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এমভি আব্দুল্লাহকে ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে।

সবশেষে ভারতীয় জনপ্রিয় এ গণমাধ্যমগুলোর এমন দাবির যৌক্তিক কোন সত্যতা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post জাতির মহানায়কের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী আজ
Next post এমভি আব্দুল্লাহ নয়, রুয়েন উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌ বাহিনী
Close