Read Time:6 Minute, 9 Second

গ্রামীণ টেলিকমের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জামিন দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। জামিনের পর আদালত চত্বরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে। এ ঘটনা শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ খেয়াল করছে। এই বিচারে কী হয়? আমরা যা যা করছি, তারা সবিস্তারে তা দেখছেন।

রোববার দুপুরে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। আদালতে ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। দুদকের পক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন স্পেশাল পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।

সাংবাদিকদের ড. ইউনূস বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বটতলা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এ ঘটনা গণমাধ্যমে আসবে। আপনারা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবেন। কিন্তু এ ঘটনা ভবিষ্যতে যুগ যুগ ধরেই নানা বইতে প্রকাশিত হবে। জাতির ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে যাবে। এটার জন্য কি আমরা গর্ববোধ করব, নাকি অপরাধবোধ করব? এ রকম একটা সন্তানকে এমন অপরাধে অপরাধী কেন করলাম? এগুলোর জবাব থেকে মুক্তি নাই।

এটি ঐতিহাসিক ঘটনা কেন, তারও ব্যাখ্যা দেন ড. ইউনূস। বলেন, একজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিং ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি শুধু একা নই; আমার সঙ্গে আরও সাতজনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ, যারা সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছে গরিব মানুষের জন্য। তারা কোনো চাকরি করতে এখানে আসেননি। তারাও অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের জন্য অভিযুক্ত।

ড. ইউনূস বলেন, আইন মানুষের শুভকামনা করে রচনা করা হয়। আইন মানুষের মনে স্বস্তি আনে, শান্তি আনে। আবার আইন মানুষের মধ্যে আশঙ্কা আনে। শঙ্কা জাগায়… ভয়ংকর শঙ্কা জাগায়।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনারাও ঠিক করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আজ যে বিচারে বসল, সেটি সঠিক কারণে হয়েছে কিনা, সঠিকভাবে হয়েছে কিনা। আমার মুখের দিকে তাকানোর কোনো দরকার নেই। আপনারা যা নিজে মনে করবেন, তা-ই পরের প্রজন্মকে জানাবেন। আগের প্রজন্মকে জানাবেন। যারা এখানে উপস্থিত হয়নি, তাদের জানাবেন।

তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা এগুলো স্কুলে পড়বে। তারা তো নোবেল পুরস্কারের কথা ভুলতে পারবে না। তখন তারা পড়বে তাঁর নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেয়, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ দেয়, জালিয়াতিতে দেয়; তখন তারা কনফিউশনে পড়ে যাবে। আসলটা কী! এটা কি মুখোশ, নাকি আসল মানুষ। তারা একাই নাকি তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ আছে।

এ মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলায় দুদক ১৩ জনকে আসামি করলেও পরে অভিযোগপত্রে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসানের নাম যুক্ত করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে রূপান্তর করায় মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করেন।

জামিনের মেয়াদ বাড়ল:
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আদালত থেকে ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বেড়েছে। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল এ আদেশ দেন। তবে কত দিন পর্যন্ত এ মেয়াদ বাড়বে, আদালত সে বিষয়ে পরে লিখিত সিদ্ধান্ত দেবেন। ইউনূসের পক্ষে করা আপিলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৬ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।

অন্য তিন আসামি হলেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। গত ১ জানুয়ারি ঢাকার ৩ নম্বর শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা তাদের দণ্ডাদেশ দেন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post গত ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ফেব্রুয়া‌রি‌তে
Next post বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে গর্ভপাতকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিলো ফ্রান্স
Close