ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, মানবাধিকার ও নির্বাচন ঘিরে ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই একসময় খেসারত দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর সাম্প্রতিক আয়োজিত ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তরুণদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ হলো গ্যাস। আমি যখন ৯৬ সালে সরকারে আসি তখন ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার দিয়ে অনেক কোম্পানি আসে। আমেরিকান কোম্পানিও এখানে তখন গ্যাস উত্তোলন করে। তখন একটা প্রস্তাব এলো যে গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি এতে আপত্তি করলাম। সেই আপত্তি করার খেসারত আমাকে দিতে হয়েছে। ২০০১ এর নির্বাচনে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। আমার দেশের ভেতর আর বাইরের চক্রান্ত এক হয়ে গেল। তো এরকম কিছু ব্যাপার আছে। এরা সবসময় হস্তক্ষেপ করতে চায়।
তিনি বলেন, আজকে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা তোলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, তারা নিজের দেশের দিকে তাকায় না। মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু তারা অন্য জায়গায় এসে খবরদারি করে। এই মোড়ালিপনা যে তাদের কে করতে দিল আমি সেটা জানি না। তারা আমাদের শ্রম অধিকার নিয়ে কথা বলে। তাদের ওখানে কর্মীরা একটা স্ট্রাইক করলে সবগুলাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়। এতে তাদের কিছু আসে যায় না, কিন্তু অন্য দেশের বেলা নাক গলায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে আমি ফিলিস্তিন ইস্যুটা তুলেছিলাম। ইউরোপীয় ইউনিয়নেও আমি যখন গেলাম তখন খুব শক্তভাবে এই প্রশ্নটা তুলেছিলাম, ফিলিস্তিনি শিশু ও নারীদের মারা হচ্ছে, এখন কেন সবাই চুপ। এমনকি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দুই দুইবার যুদ্ধ বন্ধের জন্য যে প্রস্তাব আসে তাতে আমেরিকা ভেটো দিল। ইরানে শাহ পালভীর যখন পতন হয় তিনি একটা কথা বলেছিলেন, আমেরিকা যার বন্ধু হবে তার শত্রু লাগবে না। হাজার হাজার যুবক ইউক্রেনে জীবন দিয়েছে। রিফিউজি হয়েছে কত মানুষ। এখন যুক্তরাষ্ট্র বলছে তাদের টাকা নাই, দিতে পারবে না, করতে পারবে না সহায়তা। তাহলে যুদ্ধটা বাঁধাল কেন? এই উসকানি তারা দিল কেন? রাশিয়ার এই আক্রমণ আমরা সমর্থন করিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতিসংঘে আমরা খুব হিসেব করে পা ফেলি। কারণ আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। কিন্তু ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের এক স্ট্যান্ড, আবার ওইদিকে ফিলিস্তিনি শিশুদের হাসপাতালে বোম ফেলা, সাধারণ মানুষকে বোমা ফেলে হত্যা করা, বন্ধ না করে তারা ইসরায়েলকে উল্টো আরও অস্ত্র কেনার টাকা দিচ্ছে। তাদের মানবাধিকারের ডেফিনেশন কী সেটাই আমরা বুঝলাম না। পৃথিবী মনে হয় এটা বুঝতে পারেনি। তবে সারা বিশ্ব এ ব্যাপারে সচেতন। আমি জানি ২০০১ সালে গ্যাস না দেওয়ার পর তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ঝামেলা করেছিল। তবে জনগণ এখন সচেতন। তারপরেও কারও সঙ্গে কম্প্রমাইজ করে ক্ষমতায় যেতে হবে ওই চিন্তা আমি করি না। তারা তো আমার বিরুদ্ধে সারাক্ষণ লেগেই আছে, তবে তাতে কিছু আসে যায় না। তারা নির্বাচনের বিষয়ে অনেক কথা বলে।
যখন তাদের প্রশ্ন করা হয়, এই যে বিএনপি ট্রেনে আগুন মা-শিশু পুড়িয়ে ফেলল। এ ব্যাপারে তাদের মুখ বন্ধ। এ ধরনের ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের কারণে তাদের নিজেদেরই একসময় খেসারত দিতে হবে। এটা হলো বাস্তবতা।
More Stories
উগ্রবাদীদের সাথে সরকারের একটি অংশ মিলে হিন্দুদের উচ্ছেদে চেষ্টা চালাচ্ছে: চিন্ময় কৃষ্ণ দাস
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী অভিযোগ করেছেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে যেখানেই আন্দোলন হয়েছে, সেখানেই...
আ.লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: নুর
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে...
গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গে জড়িতরা...
আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেন জামায়াত আমির
সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আমির...
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...