Read Time:7 Minute, 14 Second

নির্বাচন বর্জন করা চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের ডাকা সংলাপে বিএনপি ছাড়াও ডান এবং বামপন্থি দলগুলোও যোগ দিয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচন বর্জন, সরকারের পদত্যাগ এবং রাষ্ট্র মেরামতে ঐক্যের কথা বলেছেন দলগুলোর নেতারা। রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব যোগ দেন সংলাপে।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংলাপে অংশ নেয় বিএনপি, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগপা, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদের উভয় অংশের মতো মধ্যপন্থি দলগুলো। ছিল জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী পরিষদের মতো বামধারার দল। ধর্মভিত্তিক দলের মধ্যে খেলাফত মজলিশ ছিল। জামায়াতে ইসলামী না থাকলেও দলটির সমর্থিত সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের প্রতিনিধি ছিলেন। যোগ দেয় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ।

সংলাপে সভাপতিত্ব করা ইসলামী আন্দোলনের আমির তথা চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ১১ দফা তুলে ধরে তিন প্রস্তাব দেন। সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে, জালেম সরকারের সঙ্গে হাত মেলাবেন না। স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসীরা নীল নকশার নির্বাচনে যাবেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকারের জুলুম নির্যাতনে বাম, ডান সবাই আজ এক কাতারে চলে এসেছে। মজলুমের ঐক্য হয়েছে।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি বলেছেন, তিন বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামী একসঙ্গে লড়াইয়ের ডাক দিলে একাত্তরের মতো জনগণ সরকারের বিপক্ষে নেমে আসবে।

প্রথমবারের মতো ধর্মভিত্তিক দলের সভায় যোগ দেওয়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ঘরে যখন আগুন লাগলে নেভাতে পাড়া প্রতিবেশীকেও ডাকতে হয়। দেশে আগুন লেগেছে বলেই প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ইসলামী ধারার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের বিষয়ে সংশয় দূর হয়েছে। কাকের গোশত কাকে খায় না। আওয়ামী লীগ নিজ দলের প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী দিয়ে কাকের গোশত খাওয়া শুরু করেছে। ভোট চোরদের পক্ষে থাকায় ভারতের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হয়েছে। যা ভারতের পরাজয়।

এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, লাভের জন্য ও ভয়ে ঐক্য হয়। মানুষকে তার অধিকার হারানোর বিষয়টি হয়ত বোঝানো যাচ্ছে না। বোঝাতে পারলেই, মানুষ রাস্তায় নামবে। এক সপ্তাহের খোরাকি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহত করা যায়নি। এ সরকারের সঙ্গে সংলাপে কিছু হবে না। দল, মত নির্বিশেষে রাজপথে নামতে হবে। নইলে কিছুই হবে না।

সংলাপে লিখিত বক্তব্যে তপশিল বাতিল করে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি, সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সখ্যানুপাতিক নির্বাচনের প্রস্তাব দেন চরমোনাইয়ের পীর। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, একতরফা নির্বাচন করতে বিরোধী মতকে স্তব্ধ করতে সরকার নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিরোধী দল চরম দমন-পীড়নের মুখোমুখি। শত শত মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের মৃত নেতাকর্মীদেরও কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। সংলাপ শেষে জানান, সবার পাওয়া মতামত নিয়ে কর্মসূচি ঠিক করবে ইসলামী আন্দোলন।

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনা সংলাপে বক্তৃতা করেন সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি তথা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ড. খলিলুর রহমান মাদানী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, গণফোরামের একাংশের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মওলা রনি, এলডিপির মহাসচিব শাহাদত হোসেন, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, এনডিপির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের, বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ, খেলাফত মজলিশের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব ইউনুস আহমাদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তৃতা করেন। তারা বলেছেন, ‘ডামি প্রার্থী’ দেওয়ার নামে আওয়ামী লীগ পাতানো নির্বাচন করতে যাচ্ছে। স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় বাম ও ডান সব দল এক টেবিলে বসতে পারা অনেক বড় বিষয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিয়ে পুনঃতপশিল ঘোষণার দাবি: আলোচনা সভায় বিশিষ্টজন
Next post নির্বাচনে বৈশ্বিক কোনো চাপ নেই : ইসি আলমগীর
Close