Read Time:6 Minute, 16 Second

ভারত কোনো বিশেষ ও নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না। কারণ একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক হয়। যখন যে সরকার থাকে, সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক হয় দুই দেশের উন্নয়নের জন্য। আমরা তোমাদের গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করি।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) ভারতে সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত সচিব অরিন্দম বাগচী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তৎপরতা ও এ প্রেক্ষাপটে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিষয়ে সেদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা চাই, সেখানে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, সেদেশের জনগণের সঙ্গে।

ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের বিরোধিতা ছিল বলে ছড়ানো তথ্যকে নাকচ করে দিয়ে অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘যারা এসব তথ্য ছড়ায় তারা ব্রিকসের সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া জানে না। ভারত সুযোগ পেলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়। তারই অংশ হিসেবে নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতের সংবিধানে এমন কিছু নেই, এমন কিছু হয়ও না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধানে যা বলা আছে, হয়তো সেটাই হবে। এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

চীন ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক তা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। বাংলাদেশ যদি মনে করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে তাদের ভালো, তাহলে সেটা তারা করবে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। তারা তাদের সংবিধান অনুযায়ী চলবে।’

এর আগে ভারতের যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগ) স্মিতা পান্থ বলেন, ‘গত সাত-আট বছর দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় এগোচ্ছে। হয়তো কখনো একটু ধীর কখনো দ্রুত গতিতে এগিয়েছে, কিন্তু এগিয়েছে। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪৬টি প্রকল্প চলমান। এছাড়া ৬৪টি ক্ষুদ্র বিনিয়োগও আছে।’

দুই দেশের যোগাযোগ খাতে ভারত বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং করছে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ, ত্রিপুরার সঙ্গে রেল ও নদীপথের যোগাযোগ উল্লেখযোগ্য। সবশেষ দুই বছর উন্নয়ন খাতে ভারত অনেক কাজ করেছে। ট্রানজিট ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাণিজ্য ও রপ্তানির সুযোগ দিচ্ছে ভারত। রপ্তানিকারকরা এতে লাভবান হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

স্মিতা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ভারত এর উদাহরণ। ওদিকের রাজ্যগুলোতে এখন উন্নয়ন হচ্ছে এবং বাংলাদেশ সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ভিসা নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা সাময়িক। শিগগির এটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আপনারা ভ্রমণ করলে ভারতই লাভবান হয়। সুতরাং এ সমস্যা কেটে যাবে। এছাড়া দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক কীভাবে আরও সহজ করা যায় সেটা নিয়েও কাজ করছে ভারত। ভারতে আসার জন্য এখন ডলার আনার দরকার নেই। টাকা-রুপি কার্ড চালু হয়ে গেলে ভ্রমণকারীরা ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারবেন। ইউপে’র মাধ্যমে ভারতে সব ধরনের খরচ করতে পারবেন বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরা।’

ভারত এখন নিত্যনতুন উদ্ভাবন, সবুজ জ্বালানি, প্রযুক্তি প্রভৃতি দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানান স্মিতা পান্থ। এসময় বাংলাদেশিদের জন্য ভবিষ্যতে ভারত আরও বেশি স্কলারশিপ বাড়াবে বলে জানান তিনি।

সবশেষ স্মিতা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের সীমারেখা আকাশেও নয়। নিরাপত্তা ইস্যুতে, কানেক্টিভিটি এবং উন্নয়ন সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড মহামারিকালেও বাংলাদেশে ভারতের উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রম থেমে থাকেনি। তৃতীয় দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারতের কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পেরেছে।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগ) নবনীতা চক্রবর্তী প্রমুখ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির
Next post রাষ্ট্রপতির ওপেন হার্ট সার্জারি বুধবার
Close