গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপি একা নয়, সারা বিশ্ব সঙ্গে আছে দাবি করে এই আন্দোলনে সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলছেন, আসুন আমরা সবাই একযোগে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঝাপিয়ে পড়ি-এই হোক আজকে গণতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান। নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর উত্তর ও দক্ষিন বিএনপির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সরকার পদত্যাগের এক দফা এবং মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়। কাকরাইল থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত নয়া পল্টনের দীর্ঘ সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিততি জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর পরই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, হাতে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’, মুক্তি, মুক্তি, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, এমন ভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নয়াপল্ট এলাকা।
আর বিলম্ব নয় এখনই সবাইকে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে নেতাকর্মেীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গণতান্ত্রিক দিবসে আমাদের শপথ হচ্ছে যেকোনো মূল্যে এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। কোনো নির্বাচন হবে না নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া। তাই আসুন হবে এই দানবীয় সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে সকলে মিলে রাজপথে স্বোচ্চার হয়ে তাদের বিদায় নিশ্চিত করি। এ সময় নেতাকর্মীরা ওবায়দুল কাদের বলে ‘ভুয়া, ভুয়া’, বলে অঅওয়াজ তুলতে থাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের উদ্দেশ্যে বলছি- এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। কেনো দিতে চান না। যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, যদি জনগন ভোট দিতে যেতে পারে তাহলে তারা ১০টা আসনও পাবে না। সেজন্য তারা প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে সাজাচ্ছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর প্রধান আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিনকে কারাদন্ড প্রদানের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আরেকটা কথা বলতে চাই, মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার নিয়ে, বিচারবর্হিভূত হত্যার বিরুদ্ধে যিনি কথা বলেছেন, যিনি নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছিলো সেই হেফাজতে ইসলামী মিটিংয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন তাকে কারাদন্ড দিয়েছে। আজকে এই সরকার এতো ভীত সন্ত্রস্ত্র যে তাদেরকে দুই বছর করে কারাদন্ড দিয়েছছে।
তিনি বলেন, আজকে সারা বিশ্ব এই সরকারের নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে যে, অবিলম্বে তাদেরকে মুক্ত করতে বলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তারা রেজুলেশন করেছে যে, অবিলম্বে এই মামলা বাতিল করে তাদের মুক্ত করা হোক এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হোক, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হোক।
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেছেন যে, আমি এতো ভালো ভালো নির্বাচন করি আর দেশে-বিদেশে প্রশ্ন করে নির্বাচন ভালো হয় না। এটাই হচ্ছে এই বছরের ‘টক অব দি ইয়ার’, এটাই হচ্ছে এই বছরের শ্রেষ্ঠ কৌতুক। হাসিনা নির্বাচন ভালো নির্বাচন করে, একথা ঘোড়াও বিশ্বাস করে না।ওরা শুনলে হাসে… তাই না। এই হচ্ছে অবস্থা।
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’
মির্জা ফখরুল বলেন,নিউইয়র্ক টাইমস তারা বলছে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিরব মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে। ভারতে টাইমস অব ইন্ডিয়া তারা গতকাল একটা নিবন্ধ ছাপিয়েছে যেখানে তারা বলেছে যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে। তারপরও তাদের(সরকার)বোধদয় হয় না। চলে যায় বিদেশে, চলে যায় সেলফি তোলার জন্য।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমার, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ ও তার স্ত্রী আমান সহ নেতাদের মিথ্যা মামলায় কারাদন্ড প্রদানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই তারা বিভিন্ন সূতায় অজুহাতে সারাদেশে গণতান্ত্রিক কর্মী যত আছে, বিএনপি যত নেতা-কর্মী আছে তাদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে আটক করে রাখছে।
কারণ একটাই সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সমস্ত বিরোধী দলকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে আর নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে যেন বিরোধী দলের নেতারা অংশ নিতে না পারে সেই কারণে নেতাদেরকে আটক করে রাখতে হবে। এই যে ঢাকা মহানগরের নেতাদেরকে যুব দলের নেতাদেরকে আটক করে রেখেছেন তাতে কি আজকে মহানগরের এই সমাবেশে লোক কম হয়েছে? হয়নি। মামলা দিয়ে আটক করে এই সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না।
মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, উলামা দলের শাহ নেসারুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে আমরা সমবেত হয়েছি, কারণ, এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিলো গণতন্ত্রের জন্য। যে দেশের জন্য শহীদ জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, লাখ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছে। এ গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ সরকার হত্যা করেছে। এ সরকার গনতন্ত্র হরণ করে বাকশালি শাসন কায়েম করেছে। এরা শুধু গণতন্ত্র হত্যাই করেনি, মানুষের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। আজকে দেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে রাজপথে আছে। ৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগও অংশ নিয়েছিলো। তখন কি সংবিধান লঙ্ঘিত হয়নি। মানুষের জন্য সংবিধান। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। আজকে মানবাধিকারের কথা বললে অপরাধ হয়ে যায়। এর জবাব একদিন এ সরকারকে দিতে হবে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে গণতন্ত্র আছে? নেতাকর্মীরা না না বলে স্লোগান দেন। আজকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনে মানুষ রাস্তার নেমেছে। এটা ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির আরেকটি আন্দোলন। মুক্তি যুদ্ধের পরে আবার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে অধিকার ফিরে পেতে। তিনি বলেন, আন্দোলন হচ্ছে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে। কোনো সরকার বা দলের বিরুদ্ধে নয়।
তিনি বলেন, দেশে আওয়ামী সরকার রেজিমের দখলে চলে গেছে। তারা রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ গুলোকে দখল করে নিয়েছে। আজ দেশের মানুষ এক দিকে, রেজিম একদিকে। তিনি বলেন, দেশেরক্ষায় মানুষ যখন বিপক্ষে অবস্থান নেয়, কোনো রেজিম টিকে থাকতে পারে না। আজকে থেকে শুরু করে ফ্যাসিস্ট বিদায় না নেয়া পর্যন্ত আমরা বাড়ি ফিরে যাবেনা।
মির্জা আব্বাস বলেন, বর্তমান সরকার, সরকার নয়, এরা কর্তৃত্ববাদী। এরা গুম খুন সাজা দিয়ে দেশকে অস্থির রেখে লুটপাট করছে। জনগণকে কোনো তোয়াক্কা করে না, এদের ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র অস্ত্র পুলিশ আর কোর্ট। এরা যেকোন ভাবেই ক্ষমতায় থাকতে চায়। এদের কোনো লজ্জা সরম নেই। তারা বলে নির্বাচিত সরকার। পুলিশ আমলা ব্যবসায়ী এমনকি সাংবাদিকরাও ১৫ বছর ভোট দিতে পারে নাই। ভোট না দিয়ে যদি ক্ষমতায় থাকা যায়, তাহলে ভোটের দরকার কি?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি নির্বাচনে শত কোটি টাকার গরু ছাগল বিতরণ করবে। জুতা মেরে গরু দান। এদেশের মানুষ গরু ছাগল চায় না, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা চায়, খেয়ে বেচে থাকতে চায়। সরকারের ডিসি (ব্যাচ ২৭) যদি থাকে তাহলে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
More Stories
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...
বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস
ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে সেগুলোর বিচার শেষে দলটিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে বলে...
সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া
ছয় বছর পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল হাস্যাজ্জ্বল খালেদা জিয়াকে। সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে...
শেখ হাসিনাকে ফেরানোর নির্দেশনা নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে দুই দেশের বৈঠকে আলোচনার সুযোগ...
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বললেন উপদেষ্টা মাহফুজ-আসিফ-নাহিদ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ...