ভারতের গুজরাটের আদালত গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা ও সংসদ সদস্য (এমপি) রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে জল্পনা দানা বেঁধেছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে মন্তব্য করার মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাহুল গান্ধীকে বরখাস্ত করে সেই জল্পনা সত্য প্রমাণ করলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, গতকাল গুজরাটের সুরাত জেলা আদালতের বিচারক এইচ এইচ বর্মা অবশ্য ২ বছরের জেলের সাজা ঘোষণার পাশাপাশি রাহুলকে ১০ হাজার টাকার জামিনে মুক্তি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চতর আদালতে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করার ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেননি তিনি। ফলে আইন মেনেই ‘দোষী’ রাহুলকে বরখাস্ত করেছেন স্পিকার। ঠিক যেভাবে দুই মাস আগে খুনের চেষ্টার অপরাধে ১০ বছর জেলের সাজাপ্রাপ্ত লক্ষদ্বীপের এনসিপি সংসদ সদস্য মহম্মদ ফয়জলকে লোকসভা থেকে বরখাস্ত করেছিলেন তিনি।
লক্ষদ্বীপের নিম্ন আদালতের সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন কেরালা হাইকোর্ট। শুধু জেলযাত্রা আটকানো নয়, দোষী ঘোষণার ওপরেও ছিল সেই স্থগিতাদেশ। পাশাপাশি, তার এমপি পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লোকসভা সচিবালয়কে নির্দেশ দেন কেরালা হাইকোর্ট। ফলে এমপি পদ ফিরে পেতে চলেছেন ফয়জল।
উচ্চতর আদালত যদি সুরাত জেলা আদালতের সামগ্রিক রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং কেরালা হাইকোর্টের মতো নির্দেশিকা জারি করেন, তবে রাহুলের পক্ষেও এমপি পদ ফিরে পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
যদিও শুক্রবার সরকার পক্ষের নজিরবিহীন তৎপরতা দেখে বিরোধী নেতারা মনে করছেন, দ্রুত ওয়েনাড়ে (কেরালার যেখানে রাহুল এমপি) উপনির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হতে পারে। যদিও উচ্চ আদালত মনে করলে সেই প্রক্রিয়ার ওপরেও স্থগিতাদেশ দিতে পারে।
এদিকে এমপি পদ ফিরে পাওয়া ফয়জল বলেন, ‘আমার ক্ষেত্রে কেরোলা হাইকোর্ট সদস্যপদ ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাহুলের ক্ষেত্রেও তেমন হতেই পারে।’
অতীতে স্পিকারের সিদ্ধান্ত খারিজ করে বিধায়কের সদস্যপদ ফেরানোর নজির রেখেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেড় দশক আগে কর্নাটক বিধানসভার স্পিকার তথা বিজেপি নেতা কেজি বোপাইয়া দলত্যাগ বিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ করে একাধিক বিরোধী বিধায়কের পদ খারিজ করেছিলেন। কিন্তু শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তারা পদ ফিরে পান।
ভারতের আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার গুজরাট আদালত দুই বছরের সাজা দেওয়ায় আইনি দৃষ্টিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার কথা ছিল। ফলে স্পিকারের সিদ্ধান্ত আইন-বহির্ভূত পদক্ষেপ নয়। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সাজা ঘোষণার দিন থেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার হারাবেন এবং মুক্তির পর অন্তত ছয় বছর পর্যন্ত ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু উচ্চতর আদালত রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিলে পদ ফিরে পেতে বাধা নেই।
More Stories
বাংলাদেশিদের বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি বিজেপি সভাপতির
ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিদিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা। গতকাল শনিবার ঝাড়খণ্ডের পালামৌতে...
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী : ভারত সরকারের মুখপাত্র
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ভারত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করে। বৃহস্পতিবার (৭...
আবারো বাংলাদেশিদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য মোদির
ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে...
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে যা বললো ভারত
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, না কি অন্য দেশে চলে গেছেন, তা নিয়ে কিছুদিন ধরেই জল্পনা চলছে। বাংলাদেশের...
ভারতে মহানবীকে নিয়ে কটূক্তিকারী পুরোহিত ‘আটক’
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-কে নিয়ে কটূক্তি করায় ভারতে ইয়াতি নরসিংহানন্দ নামের এক হিন্দু পুরোহিতকে আটক করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান...
মোদির ভাষণে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গ, উঠছে ‘অজস্র’ প্রশ্ন
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে নির্বাচনের আগে বারবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে বিজেপি। বুধবার (২ অক্টোবর) স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও...