Read Time:7 Minute, 6 Second

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনন্য গাঁথা মুক্তির গানের চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক লিয়ার লেভিন বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমেরিকানরা কেউ কাজ করার পর কে কাজটি করেছিল প্রয়োজন শেষে ভুলে যায়। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে যেভাবে সম্মান করে যাচ্ছে তাতে আমি অভিভূত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

রোববার নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লিয়ার লেভিন এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে ৬ সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টা তথ্যচিত্রের ভিডিও ধারণ করার পর তিনি ভারতে গ্রেপ্তার হন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাকে ভারত এবং বাংলাদেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। এক সপ্তাহ কারাবাস শেষে সহকর্মীসহ তাকে ভারত ত্যাগ করতে হয়। আর এর মধ্য দিয়ে ৭২ ঘণ্টায় থেমে যায় মুক্তির গানের মতো দুর্লভ ভিডিও চিত্র। তার নির্মিত ‘জয়বাংলা’ তথ্যচিত্র আজো আলোর মুখ দেখেনি।

এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লিয়ার লেভিন বলেন, সেসময় ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করার কারণে একজন আমেরিকান সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিল না। বাংলাদেশ দ্রুত স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় ২২ ঘণ্টার ফুটেজ থেকে ৭২ মিনিটের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র ‘জয়বাংলা’ আজো আলোর মুখ দেখেনি।

‘জয়বাংলা’র কথা বলার সময় চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর আমার বেসমেন্টে পড়েছিল ১৬ মিলিমিটারের ৮৩টি ক্যান। এরপর ১৯৯২ সালে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার পর আমার সৃষ্টি মুক্তির গান হিসেবে আলোর মুখ দেখে।

অনুষ্ঠানের অপর সম্মানিত অতিথি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে আমরা বলে থাকি পৃথিবীর অন্যতম সেরা ভাষণ। কিন্তু আমি মনে করি, সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার পক্ষে এর চেয়ে অনন্য ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে নেই।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আমি মনে করি এটি স্বাধীনতারও শতবর্ষ। কারণ বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, তাই আমি মনে করি, যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন সেদিনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুরু।

বহির্বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী লেখকদের নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রবাসী বলে কিছু নেই। আমরা সবাই বিশ্ব বাঙালি। বাংলা ভাষার যেকোনো লেখককে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে গুণগত মানের বিবেচনায় দেখা উচিত।

জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আরও বলেন, মুক্তির গান খ্যাত সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক লিয়ার লেভিনের ধারণকৃত ভিডিও চিত্র নিয়ে যেন আবার জয়বাংলা প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করা হয় সে বিষয়ে আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য সউদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক-গবেষক আহমাদ মাযহার। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বিশ্বজিত সাহার পরিচালনায় দেড়ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানের শেষে ছিল সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে অংশগ্রহণ করেন কবি ফকির ইলিয়াস ও ঠিকানা পত্রিকার সাঈদ-উর রব।

অনুষ্ঠানের সভাপতি মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য সউদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ২০১৬ সাল থেকে যে কর্মসূচী পালন করে আসছে তারই সর্বশেষ অনুষ্ঠান ছিল এটি। এই ৬ বছরের পথ পরিক্রমায় মুক্তধারা ফাউন্ডেশন কোভিড অতিমারির আগের ৪ বছর (২০১৬-২০১৯) একটানা মূলধারার রাজনীতিকদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস শোভাযাত্রার আয়োজন করে এসেছে। ২৬ মার্চ ২০২১কে নিউইয়র্ক স্টেটের আইন পরিষদ কর্তৃক ‘বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেটস ডে’ ঘোষণার রেজুলেশন পাস ছিল মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টার এক গৌরবোজ্জ্বল অর্জন।

উল্লেখ্য, ২৬ মার্চ ২০২১ মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজন করে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আগামী দিনের বাংলাদেশ’ শীর্ষক মুক্তধারা ভাষণ ২০২১।

অনুষ্ঠানের শুরুতে লিয়ার লেভিন ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক লেখক আদনান সৈয়দ এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য জাকিয়া ফাহীম। শাহ্ ফাউন্ডেশন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ইউরোপের কথা বলে ভারতে নিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতন: র‌্যাব
Next post দক্ষিণ আফ্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশি নিহত
Close