Read Time:6 Minute, 33 Second

সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে ‘গণ অসন্তোষে উসকানি’ আর ‘কোভিডবিধি ভাঙার’ অভিযোগে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।

ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে বন্দি সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনসহ ১১টি মামলা হয়েছে।

সবগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হলে নোবেলজয়ী এ নেত্রীর সর্বোচ্চ ১০০ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে। এর মধ্যে প্রথম মামলায় দুই অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হল।

সোমবার মিয়ানমারের একটি আদালত এ রায় দেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়।

সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দলের অন্যতম নেতা ও ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকেও একই অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল, তাকেও একই সাজা দেওয়া হয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সেদিনই সু চি ও তার দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সু চিকে তখন থেকেই গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুরু থেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে আসছে।

সোমবারের রায়ের পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনারের আঞ্চলিক উপ পরিচালক মিং উ হাহ এক বিবৃতিতে বলেন, “বিরোধীদের নির্মূল করে মিয়ানমারের কণ্ঠরোধ করার জন্য সামরিক বাহিনী কী করতে পারে, ভুয়া অভিযোগে সু চিকে এরকম শাস্তি দেওয়া হল তার সর্বশেষ নমুনা।”

বিবিসি লিখেছে, ৭৬ বছর বয়সী সু চিকে মামলার বিচারে আদালতে হাজির করা হয়েছে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য শোনার সুযোগ কমই হয়েছে।

অভ্যুত্থানবিরোধীদের গড়ে তোলা প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় ঐক্য সরকারের’ একজন মুখপাত্র ডা. সাসা বিবিসিকে বলেছেন, সু চি খুব ভালো অবস্থায় নেই।

“মিলিটারি জেনারেলরা তাকে ১০৪ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।তারা চায়, কারাগারেই তার মৃত্যু হোক।”

অং সান সু চি: গণতন্ত্রের পাখি আবার খাঁচায় বন্দি

মিয়ানমারে অভ্যুত্থান: এখন কেন? কোন ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে?

মিয়ানমারে ২০২০ সালের ভোটে কারচুপির প্রমাণ নেই, বলছেন পর্যবেক্ষকরা

বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুর পর ২০১৫ সালে মিয়ানমারে প্রথম জাতীয় নির্বাচন হয় এবং বড় জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। ওই মেয়াদের পাঁচ বছরে সাংবিধানিকভাবে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই এনএলডি দেশ পরিচালনা করে।

কিন্তু গোল বাধে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ভোট ঘিরে। ওই নির্বাচনে আরও বড় জয় নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে সু চির দল এনএলডি।

সেনা সমর্থিত বিরোধী দল থেকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটের ফল অস্বীকার করে নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হয়। এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপা উত্তেজনা চলে।

এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি নতুন সরকারের পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন ভোরেই সু চি এবং প্রেসিডেন্ট মিন্টকে আটক করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয় জরুরি অবস্থা। সেনাশাসনের অবসান ঘটিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ঠিক এক দশকের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়ে।

সেনাবাহিনীর প্রাথমিক অভিযোগ ছিল, নির্বাচনে গণহারে কারচুপি হয়েছে। যদিও তারা তাদের এ অভিযোগের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি। পরে স্বাধীন পর্যবেক্ষকরাও জানান, সেনাবাহিনীর ওই অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

ওই অভ্যুত্থানের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায়। সেই বিক্ষোভ দমাতে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মাত্রা আরেক দফা বাড়ে। রাজনৈতিক কর্মী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ গণতন্ত্রপন্থি দশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের হিসাবে ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৩ জন নিহত হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে।

 

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য তার ব্যক্তিগত: কাদের
Next post তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
Close