Read Time:6 Minute, 44 Second

সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাঙা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, ‘নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পেয়েছি। ১০-১২টি জায়গায় অতিবৃষ্টি হলো, সেই বৃষ্টির কারণে মাটি ধসে ঘর পড়ে গেছে। সেখানে কিন্তু আরও অনেক ঘর ছিল। আর ৩০০টি জায়গায় যেখানে প্রত্যেকটি ঘরের ছবি আমার কাছে আছে। পুরো বিষয় তদন্ত করে দেখা গেছে, সেখানে দরজা-জানালায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ফ্লোরগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তোলা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বলব, যে ৩০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রত্যেকটির তদন্ত তাদের করতে হবে এবং রিপোর্ট দিতে হবে। এটাই আমার কথা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত বন্ধ করবে কেন? তাদের তো তদন্ত বন্ধ করার কথা না। তাদেরকে তো তদন্ত চালু রাখতে হবে, তদন্ত করে দেখতে হবে। সেগুলো (ঘর) কারা ভাঙল? তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? তারা কেন ভাঙল? সেটা যদি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে থাকে, তাহলে তদন্ত করতে হবে।’

‘আমি আগামীতে সংসদে ওই ছবিও দেখাব। এটা তো দুর্নীতির জন্য হয়নি। এটা কারা করলো? তবে হ্যাঁ, কারা করেছে, সেটা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। কিছু গ্রেপ্তার হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তার করা হবে’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বলতে গেলে, ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কম করে হলেও ১০ লাখ মানুষকে আমি ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এবার যে ঘটনাটি ঘটেছে, এখানে (সংসদে) একজন মাননীয় সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন, আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এটা আমরা তদন্ত করছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘একজন মাননীয় সংসদ সদস্য বললেন, দুর্নীতি দমন কমিশন নাকি বলছে, আমরা আর তদন্ত করব কী? প্রধানমন্ত্রী তো এ নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু যারা ভেঙেছে, তাদের নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য ছিল। এখানে দুর্নীতি দমন কমিশনের এ কথা বলার কথা তো না। এ কথা যে কর্মকর্তা বলেছে, যদি আমি জানতে পারি তাহলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা গরিবদের ঘর করে দেব, সেখান থেকেও টাকা মেরে খাবে? আমরা এখন কংক্রিট এবং স্টিল দিয়ে ঘর করে দিচ্ছি। যাতে সহজে কেউ ভাঙতে না পারে।’

বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তুলনামূলক সাফল্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, ‘বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল তিন দশমিক পাঁচ বিলিয়ন। আজকের বাংলাদেশে, করোনার সময়েও; ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমাদের রিজার্ভে আছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমি একটি ফান্ড বানিয়েছি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ফান্ড। যেখানে অনেক কাজ আমরা নিজের অর্থায়নে করতে পারি। আমরা মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিরাপত্তা করেছি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু তৈরি শুরুতে দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। বিশ্ব ব্যাংকসহ কেউ কিন্তু পরে তা প্রমাণ করতে পারেনি। আজ সেতুর কাজ কিন্তু প্রায় শেষ। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল করবে। সেখানে কিন্তু গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইন করা হচ্ছে। মেট্রোরেল কিন্তু এখন দৃশ্যমান। ট্রেনটি যাতে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যায়, সে ব্যবস্থা কিন্তু আমরা নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মিডিয়াতে কে কী লিখল আর টকশোতে কী বলল ওসব নিয়ে আমি দেশ পরিচালনা করি না, আমি দেশ পরিচালনা করি অন্তর থেকে। এসব টকশোতে সমালোচকরা অভ্যাসবশত সরকারের সমালোচনা করেন। আছে কিছু লোক। আছে না? যারে দেখতে নারি তাঁর চলন বাঁকা। এই অবস্থায় কিছু লোক ভুগে। আর কিছু লোক আছে হতাশায় ভুগে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের মানুষের একটা বদঅভ্যাস হয়ে গেছে কথায় কথায় হতাশ হওয়া। আর যতই কাজ করি তারপরও বলবে এটা হলো না কেন, ওটা হলো না কেন? আমি একটু বলব; এটা না বলে আগে কী ছিল আর এখন কী আছে সেটা দেখলেই তো হয়ে যায়। সেটা দেখতে পারবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এই দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য বছরের পর বছর তিনি জেল খেটেছেন। নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন, সেই মানুষগুলোর জন্য কী কাজ করতে হবে, যেটা শিখেছি আমার বাবার কাছ থেকে মায়ের কাছ থেকে আমি সেটাই কাজে লাগাই। মানুষ তার সুফল পাচ্ছে কিনা? সেটা যাচাই করি। কে কী বলল ওটা শুনে হতাশ হওয়া বা উৎসাহিত হওয়া আমার সাজে না, আমি করিও না। এটাই হলো বাস্তবতা।’

 

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে বক্তব্য দেবেন ২৪ সেপ্টেম্বর
Next post যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া আঞ্চলিক শান্তি বিনষ্ট করছে : চীন
Close