Read Time:6 Minute, 52 Second

রংপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে নিখোঁজ ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানিয়েছে রংপুর ডিবি পুলিশ।

নিখোঁজের নয় দিনের মাথায় ত্ব-হার বাড়ি ফেরার পর শুক্রবার বিকাল পাঁচটায় রংপুর ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মারুফ হোসেন জানান, ‘এখন পর্যন্ত তার (ত্ব-হা) বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপন করেছিলেন বলে জানা গেছে। তার ব্যক্তিগত বিষয়টি আমি বলতে চাই না।’

গত ৮ জুন রংপুর থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন আবু ত্ব-হা। তার সঙ্গে ছিলেন আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দীন ফয়েজ। গাড়িটিসহ তাদের চারজনেরই কোনো খোঁজ মিলছিল না বলে ত্ব-হার পরিবার জানায়।

ছেলেকে ফিরে পেতে ১১ জুন বিকালে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন ত্ব-হার মা। সেখানে তিন সঙ্গীসহ ঢাকা যাওয়ার পথে ত্ব-হা নিখোঁজ হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া নিখোঁজ থাকা আমিরুদ্দিনের ভাই ফয়সালও আরেকটি জিডি করেন।

ত্ব-হার খোঁজে স্থানীয় থানা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, র‌্যাব সদরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার, যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়।

তরুণ এই ইসলামি বক্তার নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তোড়পাড় শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ত্ব-হা’র নিখোঁজের বিষয়টি শোনার পর সরকারও গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছে বলে গতকাল জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর মধ্যে শুক্রবার রংপুরে শ্বশুর বাড়িতে ফেরেন আলোচিত এই ধর্মীয় বক্তা।

বাসায় ফেরার পর ত্ব-হা আদনানকে রংপুর কোতোয়ালি থানায় নেয়া হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয় জেলা ডিবি অফিসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ ব্যক্তিগত কারণে ত্ব-হার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ত্ব-হা নিখোঁজের ঘটনায় দুটি জিডি হয়েছিল। তার মা একটি জিডি করেন এবং তার সঙ্গে নিখোঁজ থাকা আমিরুদ্দিনের ভাই ফয়সাল আরেকটি জিডি করেন। এরপর থেকে পুলিশ তাদের খোঁজে মাঠে নামে। বিভিন্ন উপায়ে তদন্ত চলছিল। আজ আমরা গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, ত্ব-হা তার প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে আছেন। সেখান থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

আবু মারুফ হোসেন জানান, রংপুর থেকে প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছার পর ত্ব-হা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে সেখান থেকে গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে চলে যান। সেখানে তার পূর্ব পরিচিত বন্ধু সিয়ামের বাড়িতে অবস্থান করেন। এ সময় ত্ব-হার সঙ্গে আব্দুল মুহিত, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনও ছিলেন। ওই বাড়িতে অবস্থানকালে ত্ব-হার ইচ্ছাতেই সবাই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। কিছুদিন এভাবে আত্মগোপনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। মূলত পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে ত্ব-হা আত্মগোপনে থাকতে চান বলে সঙ্গীদের জানান এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে বলেন। তার কথায় রাজি হয়ে বাকিরাও স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।

তবে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকার দাবি করলেও এই ঘটনা রাষ্ট্র বা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলার কোনো ষড়যন্ত্র কি-না তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আবু ত্ব-হা ও আমির উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা প্রাথমিকভাবে আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। বাকি দুজনের মধ্যে আব্দুল মুহিতকে মিঠাপুকুরের জায়গীরহাট থেকে এবং ফিরোজ আলমকে বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তাদের আপাতত পুলিশি হেফাজতে রাখা হবে। প্রয়োজন হলে আদালতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। মামলায় যাওয়ার মতো কোনো প্রমাণ এখন আমাদের কাছে আসেনি।

তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না? সাংবাদিকদের করা এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘একটা অপরাধের পেছনে দেখতে হয় তাদের খারাপ উদ্দেশ্য আছে কি না? এখন পর্যন্ত দেশকে বিব্রত বা এ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় আমাদের কাছে আসেনি। এখন আমরা আপনাদের প্রাথমিক তথ্যগুলো জানাতে পারছি। কারণ মাত্র এক ঘণ্টা আগে তাকে আমরা পেয়েছি।’

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post টিকা উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা জি-৭ কে জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিব
Next post ফের আল-আকসায় ইসরায়েলি পুলিশের হামলা
Close