Read Time:11 Minute, 20 Second

আগামী ৬ই মে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠ স্কটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন। ২০০০ সালে চালু হওয়া এই পার্লামেন্টে মূলত: স্কটিশ জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ট্রান্সপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাছাড়া কয়েক প্রকার পাবলিক বেনিফিট এবং ট্যাক্স সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করার ক্ষমতা রয়েছে স্কটিশ পার্লামেন্টের।

প্রতি চার বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১২৯ জন এমএসপি (মেম্বার অব স্কটিশ পার্লামেন্ট) নির্বাচিত হন। বিভিন্ন কারণে এ বছরের নির্বাচনটি অনেকের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ।

বিশেষ করে বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে এবারের নির্বাচন বিশেষ ভাবে স্মরণীয় কেননা এবারই প্রথম কোন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী স্কটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্কটিশ লেবার পার্টি থেকে লোদিয়ান রিজিওন্যাল লিস্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন এডিনবরার ফয়ছল চৌধুরী এমবিই। ইকুয়ালিটি এন্ড হিউম্যান রাইটস এক্টিভিস্ট ফয়ছল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে লেবার পার্টির রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। ইতিপূর্বে লেবার পার্টি থেকে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট মিনিস্টার পার্লামেন্ট নির্বাচনে এডিনবরা সাউথওয়েস্ট আসনে লড়াই করেন ফয়ছল চৌধুরী। এছাড়া ২০১৪ সালে স্কটিশ রেফারেন্ডাম চলাকালীন ‘বাংলাদেশীজ ফর বেটার টোগেদার ক্যাম্পেইন‘ এর সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি। ঐতিহাসিক গণভোট এবং অন্যান্য মূলধারায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে যুক্ত করতে রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।

ফয়ছল হোসেন চৌধুরীর জন্ম হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার বদরদি গ্রামে। বাবার নাম আলহাজ গোলাম রব্বানী চৌধুরী। মা-বাবার সাথে তরুণ বয়সে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। প্রথমে ম্যাঞ্চেষ্টার এবং পরে এডিনবরায় বসবাস শুরু করেন। বাবা শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বড় ছেলে হিসাবে সেই তরুন বয়সেই পরিবারের হাল ধরেন ফয়ছল চৌধুরী। তখন থেকেই যুক্ত রয়েছেন পারিবারিক কেটারিং ব্যাবসায়।

ব্যবসার পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী তরুণ বয়সেই শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। মামা ড. ওয়ালী তসর উদ্দিন এমবিই -র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর কাছেই কমিউনিটি ওয়ার্কে হাতেখড়ি হয় ফয়ছল চৌধুরীর।

দীর্ঘদিন যাবত এডিনবরা এন্ড লোদিয়ান রিজিওন্যাল ইকুয়ালিটি কাউন্সিল (এলরেক) এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিভিন্ন সংখ্যালঘু কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য ২০০৪ সালে ব্রিটেনের রাণী কর্তৃক ‘এমবিই’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি।

সম্প্রতি করোনা মহামারী চলাকালীন, ২০২০ সালের জুন মাসে এডিনবরায় বসবাসরত অভাবগ্রস্ত এথনিক মাইনরিটি পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য দ্রব্য বিতরণের লক্ষ্যে তিনি চালু করেন ফুড সাপোর্ট প্রজেক্ট। ফয়ছল চৌধুরীর নেতৃত্বে এলরেক এর উদ্যোগে এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি সপ্তাহে ৩০ টিরও বেশি অসহায় পরিবারকে জরুরী খাবার পৌছে দেয়া হয়। প্রকল্পটি বর্তমানে চালু রয়েছে।

ফয়ছল চৌধুরী বর্তমানে স্কটিশ মুলধারায় নানাবিধ কর্মকান্ডে সক্রিয় ভাবে যুক্ত রয়েছেন যেমন- ক্লাইমেট ইমারজেন্সি স্কটল্যান্ড এর চেয়ার, এডিনবরা স্লেভারী এন্ড কলোনিয়াল লিগ্যাসি রিভিউ গ্রুপ এর কার্যকরী পর্ষদের সদস্য, মিউজিয়াম এন্ড গ্যালারীস স্কটল্যান্ড – এর বোর্ড মেম্বার, ইএসএমএস এর ইকুয়ালিটি এন্ড ডাইভারসিটি টাস্ক ফোর্সের এডভাইজার এবং ড্রামন্ড হাই স্কুল প্যারেন্ট কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

স্কটল্যান্ডের বৃহত্তম মাল্টিকালচারাল আয়োজন ’এডিনবরা মেলা’-র প্রতিষ্ঠাকালীন ও বর্তমান ডিরেক্টর ফয়ছল চৌধুরী – গিল্ড অব বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টার ইন স্কটল্যান্ড-র প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সমিতি এডিনবরার চেয়ারম্যান, কাউন্সিল অব বাংলাদেশীজ ইন স্কটল্যান্ড (সিবিএস) এর সাধারণ সম্পাদক এবং যুক্তরাজ্য নবিগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট-র ট্রাস্টি মেম্বার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সাইক্লোন আপিল এবং ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সাইক্লোন সিডর আপিলে তিনি অসামান্য ভূমিকা রাখেন।

স্কটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি:
স্কটিশ পার্লামেন্টের ভোটিং পদ্ধতিতে কে বলা হয় এডিশনাল মেম্বার সিস্টেম বা এএমএস। এই পদ্ধতিতে একজন ভোটার দুটি পৃথক ব্যালটে ভোট দেন।

প্রথম ব্যালটে (হালকা বেগুনী/ছোট সাইজের) ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় আসনের জন্য একজন এমএসপি নির্বাচিত করা হয়। স্কটল্যান্ডে এধরণের মোট ৭৩ টি আসন রয়েছে। লোদিয়ান আঞ্চলে এরকম ৯ টি নির্বাচনী আসন রয়েছে। সর্বাধিক ভোট পেয়ে প্রত্যেক আসনে আলাদা আলাদা ভাবে ১ জন করে এমএসপি নির্বাচিত হবেন।

দ্বিতীয় ব্যালটে (হালকা কমলা রং/লম্বা সাইজের) যে ভোটটি দেয়া হবে সেটি হচ্ছে একটি পছন্দের রাজনৈতিক দলকে। পুরো স্কটল্যান্ডে এরকম ৮টি রিজিওন রয়েছে। প্রতি রিজিওনে ৭ জন করে রিজিওন্যাল এমএসপি নির্বাচিত হন এই ২য় ব্যালটে দেয়া ভোটের মাধ্যমে।

দ্বিতীয় ব্যালটে প্রাপ্ত ভোট থেকে অনুপাতিক হারে ক্রমানুসারে বিভিন্ন পার্টি থেকে প্রতি অঞ্চলে ৭ জন করে মোট ৫৬ জন এমএসপি নির্বাচিত হন। এই ধরণের ভোটকে সাধারণত ‘লিস্ট‘ ভোট ও বলা হয়।

একটি জটিল গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লিস্ট ব্যালটে প্রাপ্ত ভোট থেকে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল কতজন এমএসপি নির্বাচিত হবেন তা নির্ধারন করা হয়ে থাকে।

প্রত্যেক পার্টি আগে থেকেই তাদের রিজিওনে লিস্টের প্রার্থীদের নাম ক্রমানুসারে নির্ধারণ করে রাখে। সাধারণত কোন পার্টির লিস্ট প্রার্থীদের তালিকায় থেকে ১ থেকে ৪ এর মধ্যে যাদের অবস্থান তারাই এমএসপি হিসাবে নির্বাচিত হতে পারেন।

ফয়ছল চৌধুরী লোদিয়ান লিস্টে লেবার পার্টির ৩য় স্থানে রয়েছেন। এ অঞ্চলে লেবার পার্টির প্রথম স্থানে যার নাম তিনি অন্য একটি সংসদীয় আসনের প্রার্থী ও বটে। এখন যদি ১ম স্থানে থাকা ঐ প্রার্থী তার নিজ আসনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে যান তাহলে ‘লিস্টে‘ ফয়ছল চৌধুরীর অবস্থান ২য় স্থানে উঠে আসবে। বিগত বছরগুলিতে লোদিয়ান অঞ্চলে লেবার পার্টির লিস্ট থেকে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থানে থাকা প্রার্থীরা এমএসপি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এখন পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে লিস্ট ব্যালটে লেবার পার্টির প্রাপ্ত মোট ভোটের উপর।

লকডাউন নীতিমালা অনুসরন করে লোদিয়ানব্যাপী ব্যাপকভাবে নির্বাচন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ফয়ছল চৌধুরী। তিনি বলেন, “স্কটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাঙালি কমিউনিটির অংশগ্রহণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভোটারদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া মিলছে। এতে আমি অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হচ্ছি। আমাদের লালিত স্বপ্ন পূরণের ব্যাপারে আমি প্রচন্ড রকম ভাবে আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী। এতে কমিউনিটির দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি”।

ফয়ছল চৌধুরী আরও বলেন- “স্কটল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশীদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যে, আপনারা বেশি বেশি করে মূলধারার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হোন এবং এর মাধ্যমে আপনাদের দাবি দাওয়া সরকারের নিকট তুলে ধরুন। প্যানডেমিক পরবর্তী স্কটিশ অর্থনীতি বিনির্মাণে লেবার পার্টি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়নে আপনারা আপনাদের দুটি ভোটই লেবার পার্টিকে দিন”।

 

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post সিঙ্গাপুরে সর্বোচ্চ বিক্রির তালিকায় প্রবাসী শরীফ উদ্দীনের বই
Next post পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখবেন মমতা: বুথফেরত জরিপ
Close