Read Time:4 Minute, 36 Second

দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বামীর খুনের খবর শুনে পাগলের মতো হয়ে গেছেন স্ত্রী উম্মে ফারজানা। তার আর্ত-চিৎকারে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে। ৬ বছরের কন্যা মাইশা ও ৩ বছরের কন্যা তাইয়েবাকে নিয়ে চোখের সামনে চরম অন্ধকার দেখছেন তিনি।

বারবার আর্তনাদ করে বলছেন, আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দাও, আমার সন্তানেরা কাকে বাবা ডাকবে, আমি তাদের নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। তাকে ঘিরে আছেন অসংখ্য স্বজন-পরিজন।

কিন্তু স্বজনদের কোনো প্রকার শান্তনা বাক্যই ফারজানাকে স্পর্শ করছে না। ফারজানার করুন কান্না আর দুটো অবুঝ শিশুর দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন এলাকার মানুষ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বাস্টেন বার্ক শহরের নিজ শোবার ঘরেই কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে তানভীর আহমেদ মুকুল নামে তার স্বামীকে। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের (অবসর) প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব নাইমুল হকের ছোট সন্তান। পরিবারের উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে শোকের মাতম চলছে তানভীরের বাড়িতে। বাবা নাইমুল হক ছোট সন্তানের খুনের খবর পাওয়ার পর থেকে পাথর হয়ে আছেন। তার নাওয়া-খাওয়া নেই। এমনভাবে তার সন্তানকে হারাতে হবে তিনি তা ভাবতেও পারেননি।

তানভীরের বড় ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইন্ডিপেনডেন্ট স্কুলের অধ্যক্ষ ও কসবা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ইকবাল হোসেন জানান, ৯ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তানভীর। সে ছিলো সবার আদরের। তানভীর ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। সেখানে সে ব্যবসা করতেন। তার ছিলো নিজস্ব মুদিমাল সহ নানা পণ্যের দোকান। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে ভগ্নিপতি হাসান খান ও আমিরের মাধ্যমে হত্যার খবর পান পরিবারের সদস্যরা। ওখানকার স্থানীয় পুলিশ তানভীরের ভাড়া বাসায় শোবার ঘরে লাশ পেয়ে বোনের জামাই হাসান খান ও আমিরকে খবর দেয়। তারা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেন।

ইকবাল আরো জানান, সর্বশেষ ২০১৬ সালে সে দেশে এসেছিলো। বড় মেয়ে মাইশা তখন ৩ বছরের হওয়ায় বাবাকে ভালো করে ডাকতেও পারেনি। ছোট মেয়ে তাইয়েবার জন্ম হয়েছে বাবা বিদেশে থাকতে। সে বাবাকে সরাসরি দেখেওনি কোনোদিন। করোনার সংকট কেটে গেলে তানভীরের দেশে আসবার কথা ছিলো। তার ইচ্ছে ছিলো দেশে ফিরে ব্যবসা করবে। তারজন্য সে নগদ ১২ লক্ষ টাকা, দোকানের ৭০ লক্ষ টাকার পূঁজি ও ১৮ লক্ষ টাকার গাড়ি গুছিয়ে বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলো। আমরা খবর পেয়েছি যে বাড়িতে সে থাকতো তাদের কাছে টাকা পাওনা ছিলো তানভীর। পাওনা টাকা চাওয়ায় তাকে তারা হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে। এমনকি আমার ভাইয়ের নগদ ১২ লক্ষ টাকা, ১৮ লক্ষ টাকার গাড়ি ও দোকানের সকল মালামাল খুনীরা দখল করে নিয়েছে।

ইকবাল হোসেন দাবী করেন, দ্রুত আমার ভাইয়ের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হউক। আমরা চাই সরকারের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় খুনীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হউক। খুনীরা যেন পার না পায়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তখনকার ক্ষমতাসীনরা জড়িত : প্রধানমন্ত্রী
Next post আমিরাত থেকে ফিরতে লাগবে ৪৮ ঘণ্টা আগের করোনা টেস্ট রিপোর্ট
Close