Read Time:4 Minute, 40 Second

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীতে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা। এতে করে ১৬০ কোটি শ্রমিক আজ কর্মহীন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই পালিত হচ্ছে মে দিবস। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রমিকদের অধিকার।    

এর মধ্যে দিয়ে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। এরপর থেকে প্রতি বছর মে মাসের ১ তারিখ আন্তর্জাতিকভাবে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এই দিবসটি পালনে দেশে আজ সরকারি ছুটি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে মে দিবসের সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বৈশ্বিক এ মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মালিকরা প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখবেন। তবে অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে।’ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা যেমন শিল্পপুলিশ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

করোনা মহামারী-সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বের ১৬০ কোটি খেটে মানুষ কাজ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। ২৯ এপ্রিল, বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সংস্থাটি। করোনার আঘাত লেগেছে বাংলাদেশেও। এতে করে কাজ হারিয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। এর মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত প্রায় ৫ কোটি শ্রমিকের অবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে।

প্রসঙ্গত, শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইউরোপ-আমেরিকার কারখানাগুলোতে মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করতেন। এমনকি তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিকও দেয়া হতো না। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকরা। এতে সাড়া দিয়ে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে জড়ো হন লাখো শ্রমিক। শ্রমিক বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। এরপর এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।

তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post করোনা থেকে কবে মুক্তি বলতে পারছে না কেউ
Next post লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবিতে আমেরিকায় সশস্ত্র বিক্ষোভ
Close