গণ আকারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি এবং এটি ভয়ের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে। এটা কীভাবে সম্ভব?’
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আজ রোববার সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামল এত জনধিক্কৃত হয়েছিল, তার অন্যতম কারণ ছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল না। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং আরও অনেক আইনের শিকার হয়েছি। তবে বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে। এটা কীভাবে সম্ভব? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও ২০০ বা কিছু বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ২৬৬ জন সাংবাদিক আজকে খুনের মামলা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের মামলার আসামি। এটা আমাদের জন্য অসম্মানের।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এটার অর্থ এই নয় যে কেউ দোষ করেননি। দোষ করে থাকলে সঠিকভাবে মামলা করে শাস্তি দেন এবং আমরা কোনোভাবেই তার পাশে দাঁড়াব না, যদি সত্যিকার অর্থে সমাজের বিরুদ্ধে বা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিরুদ্ধে তার অবস্থান থাকে। কিন্তু আজকে ছয় থেকে সাত মাস হয়েছে, তারা এসব মামলায় পড়েছেন। একটি কদম এগোয়নি তদন্তের ব্যাপারে।’
সম্পাদক পরিষদ সভাপতি বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কিছু করার নেই, জনগণের অধিকার আছে মামলা করার। মেনে নিলাম মামলা করা অধিকার; কিন্তু কোনো আইনের যদি অপপ্রয়োগ হয়, তাহলে কি সরকার কিছু করবে না? সেখানেই আমার বড় প্রশ্ন।’
১৩ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার আছেন উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘তারা যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু আজকে সাত মাস, আট মাস ধরে কারাগারে, তারা জামিন পাচ্ছেন না। তাদের কোনো আইনি প্রক্রিয়া চলছে না। বিচার হচ্ছে না। তাহলে এটা কি চলতে থাকবে!’
করণীয় সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, সরকার হয়তো অনেক ব্যস্ততার জন্য এই ২৬৬ সাংবাদিকের মামলা দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু তারা দৈবচয়ন ভিত্তিতে ১০-১৫টি মামলা দেখুক না, যেখানে ২০-২৫ জন অভিযুক্তের মধ্যে একজন-দুজন সাংবাদিক আছেন। তারা যদি একটা, দুইটা, পাঁচটা দৃষ্টান্ত পায় যে সাংবাদিকদের নামে হওয়া মামলা মিথ্যা মামলা, তাহলে কেন পদক্ষেপ নেবে না? বারবার বলা হয় আমাদের কিছু করণীয় নাই, আমি মনে করি যারা এই মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা করছেন, এতে তাদের আরও বলিষ্ঠ করা হয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি দাবি করছি, সরকার সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াক।’
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য দেন দ্য নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবির, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন প্রমুখ।
More Stories
দায়িত্ব নেওয়ার সময় নির্বাচন দেওয়ার কোনো শর্ত ছিল না : সাখাওয়াত হোসেন
দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি না, তা নির্বাচন কমিশনই বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার...
জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে বিভাজন ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে : এনসিপি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক...
আপাতত লন্ডন যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া, আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনের হাসপাতালে নিতে কাতারের ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হযরত...
‘আমি ভালো আর সব খারাপ’— আওয়ামী আমলের এই প্রচার এখনো চলছে: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমি ভালো আর সব খারাপ। এ রকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি ১৬ বছর ধরে।...
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
