অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত ঢাকা লেডিস ক্লাবে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি। বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি।
মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গৌণ ইস্যুকে মুখ্য ইস্যু বানাতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারবিরোধী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে সংশয় সন্দেহের জন্ম দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে এখনো রাষ্ট্র থেকে লুণ্ঠন করা হাজার হাজার কোটি টাকা রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার অর্থ সারাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।
সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সংস্কার এবং নির্বাচনকে দৃশ্যত যেভাবে মুখোমুখি করে ফেলা হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। যারা সংস্কার শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, যেটি শেষ হয়ে যায় সেটি সংস্কার নয়। কারণ সংস্কার কখনো শেষ হয় না। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
তারেক রহমান বলেন, আমরা দেখেছি পলাতক স্বৈরাচারের শাসনকালে সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের সক্রিয় সহযোগী হয়ে উঠেছিল। দেশের যেসময় গুম, খুন, নারী ধর্ষণ, অপহরণ, দুর্নীতি ও টাকা পাচার, এমনকি আয়নাঘরের মতো বর্বর বন্দিশালার বিরুদ্ধে তাদের একটি বড় অংশ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কিংবা করেনি। আমরা দেখেছি উল্টো তারা ফ্যাসিবাদের অপকর্মের জাস্টিফাই করে, একটি বয়ান তৈরি করতো। বীর জনতার রক্তক্ষয়ী এ অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট মাফিয়া সরকারের পতনের পর দীর্ঘ দেড় দশকের অন্ধকার অতীত থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অপার সম্ভাবনার এক দাঁড় উন্মোচিত হয়েছে।
বিগত সরকার সংবিধান মানেনি উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বর্তমান সংবিধান যেটিতে ইচ্ছেমতো কাটা-ছেঁড়া করে পলাতক স্বৈরাচার প্রায় তাদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছিল, সেই সংবিধানের ৬৫ অনুষদের দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। সংবিধানের সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরেও পলাতক ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সারাদেশের মানুষ দেখেছে, সারাবিশ্ব দেখেছে, বারবার জনগণের ভোট ছাড়া সংসদ গঠন করা হয়েছিল।
এজন্য বিএনপি মনে করে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কেতাবি কিংবা পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনীতির অধিকার এবং আচরণের ব্যবহারিক প্রয়োগ। জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যদিয়েই কেবল সংস্থার প্রক্রিয়া টেকসই সফল এবং কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। দীর্ঘ দেড় দশকের মাফিয়া শাসনকালে তরুণ প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটারসহ, কেউ ভোট দিতে পারেনি। এসব ভোটারদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে উচিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। নাগরিকরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন না হলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না।
More Stories
আবারও রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি মির্জা ফখরুলের
দল ও দেশের জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে প্রয়োজনে বিএনপি আবারও মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম...
ঈদের আগে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
ঈদের আগে মার্চ মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্সের পর এবার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশের মোট...
দ্রুত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করুন, সরকারকে আমীর খসরু
অন্তর্বর্তী সরকারকে ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এখন শেখ হাসিনার মতো একটি সুর শোনা...
নির্বাচনের পরে সংস্কার হবে না: নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন...
নদী ও পানি ব্যবস্থাপনায় চীনের কাছে ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছ থেকে পঞ্চাশ বছরের মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২৮...
চীনের আগে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা, মেলেনি সাড়া
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের তথা সবার আগে ভারত সফরে যেতে চাইলেও দেশটি থেকে সাড়া মেলেনি বলে...