Read Time:6 Minute, 11 Second

প্রথমে এটি এসেছিল হুমকি হিসেবে। এরপর বাস্তবে পরিণত হলো সেই শুল্ক (ট্যারিফ)। কিন্তু এখন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডাকে বলপূর্বক যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনা– যা আর কেবল রসিকতা হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না– সত্যিই ক্ষুব্ধ করে তুলেছে কানাডার জনগণকে। যারা সাধারণত ভদ্রতার জন্যই সুপরিচিত।

সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপ অনুসারে, কানাডীয়রা তাদের দেশকে রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে এবং দেশটিতে জাতীয়তাবাদ নতুন করে জেগে উঠছে। বর্তমানে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক দেশটির জনগণের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।

‘Elbows up’ বা কনুই তোলো– মূলত হকির একটি শব্দযুগল। যা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। তবে এই শব্দযুগলই এখন নতুন প্রতিরোধের স্লোগানে পরিণত হয়েছে। এটি এখন কানাডীয়দের টি-শার্টে লেখা থাকছে, সমাবেশের শিরোনাম হচ্ছে, এমনকি একটি নতুন পডকাস্টের নামও রাখা হয়েছে ‘Elbows Up’। যার প্রথম পর্বে নাগরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের বিষয়টি আলোচিত হয়।

এখনো পরিষ্কার নয় যে, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ কতদিন বজায় থাকবে বা কেনো তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করতে চান।

তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ১১ জন ক্ষুব্ধ কানাডীয় মনে করেন, এই ঘটনাগুলো দুই দেশের সম্পর্কে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।

কানাডীয়রা এখন মার্কিন পণ্য বর্জন করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের পরিকল্পনাও বাতিল করছে। দেশটির কিছু প্রদেশের ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান থেকে মার্কিন মদ ও পানীয় সরিয়ে ফেলছে। তাদের হৃদয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে।

এই ‘Elbows Up’ সমাবেশের অন্যতম সংগঠক পিটার ওয়াল বলেন, ‘এটি এক ধরনের উদ্বেগ, হতাশা এবং ক্ষোভের মিশ্রণ। আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও মিত্র দেশ এখন আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে এবং আমরা জানি না ঠিক কী করা উচিৎ’।

পিটার ও তার সংগঠনের সদস্যরা মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে কানাডার রাজধানী অটোয়ায় পার্লামেন্ট হিলে একটি সমাবেশ আয়োজন করেন। সেখানে বক্তৃতা, একটি ব্যান্ডের পারফরম্যান্স এবং হকি খেলার জন্য কোট চেক-ইন সুবিধা রাখা হয়েছিল। ৯ মার্চের সেই সমাবেশে এক হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় টরন্টোসহ অন্যান্য শহরেও আরও সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

অটোয়ার সমাবেশে ট্রাম্পকে সাম্রাজ্যবাদী বলে নিন্দা জানানো হয়। এতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল– ‘Elbows up’ এবং কানাডার জাতীয় সঙ্গীতের লাইন পরিবর্তন করে লেখা ছিল ‘True north strong and peeved’ (সত্যিকারের উত্তর, শক্তিশালী ও ক্ষুব্ধ)। সেখানে হাতে হাতে ছিল কানাডার পতাকা।

এদিকে নিজের হতাশা প্রকাশের জন্য ‘Elbows Up’ নামে একটি নতুন পডকাস্ট চালু করা সাংবাদিক জর্ডান হিথ-রলিংস যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার বর্তমান সম্পর্ককে একটি বিবাহ বিচ্ছেদের শকের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আপনার জীবনের যেসব বিষয়কে আপনি স্বাভাবিক মনে করতেন, সেগুলো হঠাৎ করে হারিয়ে যাচ্ছে। আপনাকে নতুন করে নিজের পরিচয় খুঁজে নিতে হচ্ছে এবং কানাডা এখন সেই অবস্থানে আছে’।

কানাডীয় এই সাংবাদিকের ভাষায়, ‘অনেক কানাডীয় সত্যিই ব্যথিত। বহু কানাডীয় সত্যিই ক্ষুব্ধ। আমিও নিজে সেই অনুভূতি থেকে বাদ যাচ্ছি না’।

এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসে বহু বছর কাটানোর পর সম্প্রতি পরিবারসহ কানাডায় ফিরে এসেছেন কৌতুক অভিনেতা ও শিল্পী শান মাজুমদার।

সম্প্রতি ‘Elbows Up’ সমাবেশে পারফর্ম করা এই অভিনয় শিল্পী মনে করেন, ৫০ বছর পর কানাডীয়রা এই সময়টিকে একটি মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত হিসেবে দেখবে।

শান মাজুমদার বলেন, ‘এটি কী আমাদের পরিপক্বতার একটি মোড় ছিল, যেখানে আমরা শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিচয় খুঁজে পেলাম? আমাদের পরিচয় শুধু বীবর (beavers), মাউন্টি পুলিশ বা ভদ্রতা নয়– নাকি এর নিচে আরও কিছু আছে’।

এদিকে রোববার এক বিদায়ী ভাষণেও একই স্লোগান ব্যবহার করেন সদ্য সাবেক হওয়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

তার ভাষায়, ‘আমরা এমন একটি দেশ, যখন সম্ভব কূটনৈতিক হব। আবার যখন প্রয়োজন হবে তখন লড়াই করব। কনুই তুলুন’!

সূত্র: রয়টার্স

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না: জামায়াত আমির
Next post বিগত সরকারের সময় অর্থনৈতিক তথ্য ছিল ‘গোঁজামিল নির্ভর’
Close