Read Time:9 Minute, 8 Second

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত ১৫ বছরে যারা অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল, যারা জনগণের অভ্যুত্থানের কারণে ৫ তারিখে পালিয়ে গিয়েছে এই দেশ থেকে, তারা দেশটাকে ভেঙেচুরে দিয়েছে। আপনারা দেখছেন শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, কৃষির কী অবস্থা। সব ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, নষ্ট করে দিয়েছে। এখন এগুলো রাষ্ট্র আমাদেরকে মেরামত করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মশালায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় কুষ্টিয়া, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদস্থ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, যারা যারা বর্তমানে সংস্কারের কথা বলেছেন তাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। বিএনপির বাইরে যারা সংস্কারের কথা বলেছেন তাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। এই সংস্কারের কথা আমরা দুই বছর আগে বলেছি। তারও আগে ২০১৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০-এ বলেছেন। অর্থাৎ বিএনপি যে প্রকৃতভাবে দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবে, প্রতিবার বিএনপি সেটা প্রমাণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে যখন পলাতক স্বৈরাচার অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করে বসে ছিল। অস্ত্রের জোরে মানুষকে ভয়ভীতি দাবিয়ে ক্ষমতায় বসে ছিল। আমরা জানতাম স্বৈরাচারের পতন হবে। সেই বিশ্বাস থেকে আমরা দেশের সামনে, দেশের মানুষের সামনে এই ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। কারণ দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। স্বৈরাচার যেভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল দেশকে, সেই রাষ্ট্রকে মেরামত করতে হবে। ৩১ দফাতে আমরা যা যা বলেছি, সরকার যে কমিশন করেছে, সে কমিশন যেসব বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, কমবেশি আমাদের কথাই। স্বাভাবিক, তারা একটু সরকার তো, একটু এদিক-ওদিক বলতে চাইবেই তারা। কিন্তু মূল বিষয়ে তারা আমাদের বাইরে যেতে পারছে না। আমরা চিন্তা করি দেশ নিয়ে, দেশের মানুষকে নিয়ে।

তারেক রহমান বলেন, দেশের বৃহৎ একটা অংশের মানুষ বিশ্বাস করে, যদি ভালো কিছু সম্ভব হয়, ইনশাআল্লাহ বিএনপিই এদেশের জন্য ভালো করতে পারবে। জনগণের চাহিদাগুলো, জনগণের আশা, জনগণের প্রত্যাশা চাওয়াগুলো আমাদেরকে অ্যাড্রেস করতে হবে। যে কোনো মূল্যে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। আপনারা কৃষি নিয়ে কথা বলেছেন, আপনারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলেছেন। কেন বলেছেন? জনগণের দাবি এগুলো।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমার প্রায় ৩৫ বছরের রাজনীতিতে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি বিগত ১৫/১৬ বছর ধরে বাধ্য হয়ে বিদেশে আছি। এই দেশে থাকার ফলে অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা যদি দেশে, সমাজে জবাবদিহিতা, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে তৈরি করতে না পারি, কোনোভাবেই কোনো সমস্যা সমাধান করতে পারব না। আমরা যদি নির্বাচনী ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে সমগ্র বাংলাদেশে গড়ে তুলতে না পারি, অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময় পরে যত ঝড় তুফান বন্যা বৃষ্টি যাই হোক না কেন, নির্বাচন হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এই ব্যবস্থাটাকে নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে। যেখানে জনগণ ভোটার, সেখানে জনগণকে নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঢাকা শহরে বা যেখানেই হোক, যদি প্রকৃত জনপ্রতিনিধি থাকতো, প্রকৃত ওয়ার্ড কমিশনার, মেয়র থাকত, যারা আসলেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত, তাহলে নিজের গরজেই জনপ্রতিনিধি দৌড়াদৌড়ি করে নিজেই সমস্যার সমাধান করতো। জনগণের সমস্যা সমাধানকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকতে হবে। জবাবদিহিতা গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের বহু নেতাকর্মী বিগত ১৫ বছরে গুম খুন হত্যার শিকার হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা নেতাকর্মী মিথ্যা ও গায়েবি মামলার শিকার হয়েছে। অত্যাচার নির্যাতিত হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংস করে দিয়েছে সেই স্বৈরাচার। মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মানুষের বাকস্বাধীনতা আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। রাজনৈতিক অধিকার যদি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে জনগণের কথা বলা যাবে, জনগণের সমস্যা সমাধান করা যাবে, সমস্যাটাকে অ্যাড্রেস করা যাবে, দেশের সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধান আমরা করতে পারবো। সমাধানের দায়িত্ব থাকতে হবে প্রকৃত দায়িত্বশীল ব্যক্তির হাতে। দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে প্রত্যাশা করা সম্ভব, সে ব্যক্তিকে যদি জনগণ ইচ্ছে ও পছন্দমতো বাছাই করে নিতে পারে। সেই ব্যক্তিগুলোকে যদি আমরা তৈরি করে আনতে পারি, তাহলে সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সমাধান করা সম্ভব। আমরা একটা নির্বাচন প্রত্যাশা করছি, যেই নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে, কে জনগণের দেখভাল করবে।

তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফা জনগণের জন্য, দেশের জন্য। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। বিএনপিকে দায়িত্ব পালন করতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হবে। জনগণের ও দেশের মৌলিক সমস্যা সমাধান ও রাষ্ট্র মেরামতের কারিগর হতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হবে। যে প্রতিশ্রুতি আমরা জনগণকে দিয়েছি, সেভাবে আমাদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ্যেকে কেউ যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য কেউ যদি অন্যায় করে থাকে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ গড়ে তুলবো।

এর আগে সকাল ১০টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক কর্মশালা শুরু হয়।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, মিডিয়া সেলের সদস্য ও প্রশিক্ষক ফারজানা শারমিন পুতুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করবে, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে প্রধান উপদেষ্টা
Next post ওয়াশিংটনে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষে বেঁচে নেই কেউ
Close