Read Time:8 Minute, 48 Second

 

চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বিশ্বের মূল্যস্ফীতির হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাবে। ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কারণে বিদেশের মাটিতে অবস্থিত দেশের কূটনৈতিক মিশনের চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে। এই মূল্যস্ফীতির প্রতিঘাত মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৬০টি কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘বৈদেশিক’ ভাতা বাড়ানো হয়েছে। তবে ভাতা বাড়েনি ২০ দেশের মিশনের। স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষেত্রবিশেষ সর্বনিম্ন ২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যা কার্যকর হয়েছে ১ জানুয়ারি থেকে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোকে চিঠি দিয়েছে।

এদিকে ভাতা বাড়ানোর পর সেটি পরিশোধ করতে হবে মার্কিন ডলারে। কিন্তু দেশে বর্তমান ডলারের সংকট কাটেনি। ফলে ভাতা বাড়ানোর পর বাজেটে কী ধরনের চাপ আসতে পারে সেটিও পর্যালোচনা করছে অর্থ বিভাগ। সেখানে দেখা গেছে বর্ধিত ভাতা কার্যকরের পর এ খাতে বিদ্যমান বরাদ্দ থেকে অতিরিক্ত ১১ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় বেশি হবে। অর্থাৎ ব্যয় বাড়বে ১১ শতাংশ।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক মিশনের ভাতা বাড়ানোর আগে ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১১ বছরের গড় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬০টি দেশের মুদ্রা বিনিময় হার সমন্বয় করে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরপর ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈদেশিক ভাতা বাড়ানোর কৌশল হিসেবে জীবনযাত্রার মান, ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা, ডলারের বিনিময় হার এবং ডলার ফ্ল্যাট রেট এই চার দিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন চলছে। বৈশ্বিক গতিধারা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে চীনের গড় মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতের ৪ দশমিক ১ শতাংশ, জাপানের ২ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যের ২ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১ দশমিক ৯ শতাংশে উঠবে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে ২ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল এশিয়াতে মূল্যস্ফীতি পৌঁছবে ২ দশমিক ৭ শতাংশে।
এই মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ স্থানীয় মুদ্রা বিনিময় হারের সঙ্গে সমন্বয় করে মিশনে চাকরিজীবীদের বৈদেশিক ভাতা পুনঃনির্ধারণ করেছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা তাদের মিশনগুলো যে ভাতা দিচ্ছে সে তুলনায় দেশের মিশনগুলোর বিদ্যমান ভাতা অর্ধেকের চেয়েও কম। এতে মূল্যস্ফীতির প্রতিঘাতে বিদেশের মাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা একরকম কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়ে পড়েন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মিশনের বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা প্রতি তিন বছর অন্তর সমন্বয় করা হলেও ২০১২ সালের পর বৈদেশিক ভাতা বাড়ানো হয়নি।
জানা গেছে, এর আগে ২০১২ সালে কূটনৈতিক মিশনের চাকরিজীবীদের আপ্যায়ন ও বৈদেশিক ভাতা এক লাফে ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। সেটি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। যে কারণে দীর্ঘ ১২ বছরে ধরে এ খাতে ভাতা পুনঃনির্ধারণ করা হয়নি।
জানা গেছে, বৈদেশিক মিশনের ভাতা বাড়ানোর প্রসঙ্গে প্রথমে অর্থ বিভাগকে একটি আধা-সরকারি পত্র দিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, ২০১২ সালের পর গত ১২ বছরে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৈদেশিক ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা পুনঃনির্ধারণ (বৃদ্ধি) করা হয়নি। বর্তমান কূটনীতিকগণ বহির্বিশ্বে প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেখানে আরও বলা হয় মাথাপিছু জাতীয় আয় গত ১২ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হলেও বৈদেশিক ও আপ্যায়ন ভাতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় সার্বিক অগ্রগতির সুফল মিশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে জীবনযাত্রার ব্যয় ধরে ভাতা নির্ধারণ করা হলে সেক্ষেত্রে এ খাতের বাজেট ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা ডলারের মূল্যে ২৯ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ভাতা বাড়ানো হলে সেক্ষেত্রে ১৮ লাখ মার্কিন ডলার বেশি প্রয়োজন হবে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়বে ১৪ শতাংশ। আর মুদ্রার বিনিময় হার হিসাবে ভাতা বাড়ানো হলে বাড়তি ব্যয় হবে ১৯ লাখ মার্কিন ডলার, বাজেটে বরাদ্দ বাড়বে ১২ শতাংশ। সার্বিক বিশ্লেষণ করে ক্ষেত্রবিশেষ এ ভাতা বাড়ানো হয়েছে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয় করে।
সূত্রমতে, সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে এ ভাতা বাড়ানোর আগে একটি কমিটি গঠন করেছিল অর্থ বিভাগ থেকে। ওই কমিটি সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে ক্ষেত্রবিশেষ দেশগুলোর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত ভাতা বৃদ্ধি করেছে অর্থ বিভাগ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বের ৬০টি দেশে ৮৪টি কূটনৈতিক মিশন আছে। নতুন করে আরও নয়টি দেশে মিশন স্থাপনের কাজ চলছে। তবে চালু আছে ৮০টি মিশনের কার্যক্রম। এর মধ্যে ৪৭টি দূতাবাস, ১৪টি হাইকমিশন, ১২টি কনস্যুলেট, তিনটি স্থায়ী মিশন, চারটি উপ-হাইকমিশন এবং চারটি সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটন, আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন, আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স, নরওয়ের রাজধানী অসলো ও কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে নতুন করে বাংলাদেশ মিশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post হাসিনার গোপন কারাগারে আটক থাকত শিশুরাও, দেওয়া হতো না মায়ের দুধ
Close