Read Time:7 Minute, 50 Second

সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রণ করেছে মানুষের জীবনযাত্রাকে। তার রূপচিত্র অবশ্য বদলে গেছে সময়ের পথ বেয়ে। তেইশশো বছর আগে আলেকজান্ডার সুদূর গ্রিস থেকে পৌঁছেছিলেন ভারতবর্ষ পর্যন্ত। আটশো বছর আগে দুনিয়া দেখেছে এক দুর্দান্ত সাম্রাজ্য বিস্তারকারী চেঙ্গিস খানকে। উনিশ শতকের সাম্রাজ্যবাদও প্রবলভাবে বদলে দিয়েছে দুনিয়ার মানচিত্রকে। আর এখন সাম্রাজ্যবাদের এক নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে একুশ শতকের এক-চতুর্থাংশ পার করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে’ বেশকিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।

এদিকে, শপথ নেওয়ার আগেই ট্রাম্প তার প্রতিবেশী দেশ কানাডাকেও যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি সপ্তাহ দুয়েক আগে কানাডাকে মার্কিন ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নতুন একটি মানচিত্রও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এদিকে, ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডকে পর্যন্ত কিনে নিতে চেয়েছেন তিনি। আবার মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে ‘আমেরিকান উপসাগর’ করারও প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প।

এমন পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে, নতুন আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রবেশ করতে চলছে বিশ্ব। বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিষেক ভাষণ যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক বিভাজন দূর করার বদলে পুরোনো ঐতিহ্যগুলোকে তুলে ধরেছে। তার ভাষণে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে যে, নিজের দেশের স্বার্থে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সদ্য শপথ নেওয়া এই প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি নতুন ভূখণ্ড অধিগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন; এমনকি মঙ্গলগ্রহেও।

ইকোনমিস্টের মতে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, উইলিয়াম ম্যাককিনলে একজন ‘মহান প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ম্যাককিনলে ১৮৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ও পানামা খাল নির্মাণে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

ট্রাম্প পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী। তিনি মনে করেন, খালটির মালিকানা নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে ও এটি বর্তমানে চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্পের ভাষণে সবচেয়ে চমকপ্রদ মন্তব্য ছিল, আমরা পানামা খাল পুনরায় দখল করতে যাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষায় কিছুই করা হচ্ছে না, অথচ বিদেশি সীমান্ত রক্ষায় অগণিত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।

পানামা খালের চুক্তি ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সময় সম্পাদিত হয়। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রক্ষণশীল নেতা ও সাধারণ নাগরিক এই চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে খালটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত আরও রক্ষণশীল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে, ট্রাম্প শুধু পানামা খালের পুনরুদ্ধারের কথাই বলেননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের প্রসঙ্গও তুলেছেন। ২৫তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলের আমলেই যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে। হাওয়াই, কিউবা ও ফিলিপাইনের মতো অঞ্চলেও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ব্যাপকভাবে বাড়ে। এমনকি ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহেও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা স্থাপন করা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। মঙ্গলে মার্কিন পতাকা স্থাপনকে তিনি তার দেশের ‘স্পষ্ট ভবিতব্য’ বলে উল্লেখ করেন।

তবে বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা ও ইউক্রেন যুদ্ধ। কিন্তু ট্রাম্প তার ভাষণে চীনের প্রসঙ্গ তুলেছেন কেবল পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তিনি কেবল গাজায় জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের মুক্তির বিষয়ে কথা বলেন। আর তার অভিষেক ভাষণে ইউক্রেন প্রসঙ্গ একেবারেই উপেক্ষিত ছিল।

শুল্কের বিষয়েও ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ম্যাককিনলের সঙ্গে মিলে যায়। ম্যাককিনলে ১৮৯৭ সালে ডিংলে অ্যাক্ট স্বাক্ষর করেন, যা শুল্ক ৫০ শতাংশের ওপরে নিয়ে যায়। ট্রাম্পও একইভাবে শুল্ককে ব্যবহার করে বিদেশি অর্থ থেকে জাতীয় কোষাগার সমৃদ্ধ করার কথা বলেন।

ম্যাককিনলের মতোই ট্রাম্প বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছেন। তার অভিষেক অনুষ্ঠানে জেফ বেজোস, ইলন মাস্ক ও মার্ক জাকারবার্গের মতো বিলিয়নিয়ারদের জন্য বিশেষ আসনের ব্যবস্থা ছিল। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি ‘স্বর্ণযুগে’ প্রবেশ করতে যাচ্ছে।। তবে তার কার্যক্রমের দিকে তাকালে মনে হয়, তিনি ‘গিল্ডেড যুগে’ ফিরে যেতে চান।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post অতি বিপ্লবী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি কাম্য নয়: মির্জা ফখরুল
Next post চীনা ঋণের সুদহার ১ শতাংশ করার প্রস্তাব পররাষ্ট্র উপদেষ্টার
Close