ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মনমোহন সিং ৯২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তার নাম স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অনেকটা জায়গাজুড়ে রয়েছে। এ দেশের উদার আর্থিক নীতির জনক বলা হয় তাকে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মনমোহন সিং ভারতের প্রথম অহিন্দু প্রধানমন্ত্রী এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র। মনমোহনের জন্মস্থান বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলার গ্রাম গাহ। জন্ম ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।
চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে প্রথমে স্নাতক এবং ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন মনমোহন। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক, তারপর ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ থেকে ডি’ফিল করেন তিনি।
মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং
এরপর ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত একটানা জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখায় কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে মনমোহন শুরু করেন শিক্ষকতা। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে যোগ দেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হন। ১৯৭৬ সালে হন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসচিব।
১৯৮২ সালে মনমোহনকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর করা হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন।
১৯৮৭ সালে অর্থনীতি বিষয়ক স্বাধীন সংস্থা সাউথ কমিশনের মহাসচিব পদে বসেন মনমোহন। সেখানেই ১৯৯০ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালের মার্চে তিনি ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন (ইউজিসি)-র চেয়ারম্যান পদে বসেন।
১৯৯১ সালের জুন মাসে নতুন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও তার সরকারে মনমোহনকে অর্থমন্ত্রী করেন। স্বাধীন ভারতের অর্থনীতির ইতিহাসে সেটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি। ১৯৯১ সালে কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পর কংগ্রেসের হয়ে প্রথমবার রাজ্যসভা সদস্য নির্বাচিত হন মনমোহন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান তিনি। ১৯৯৯ সালে একবার লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি।
২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর কংগ্রেস সরকার তৈরি করার মতো জায়গায় পৌঁছয়। কিন্তু ‘বিদেশি’ বিতর্কের আবহে প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। বিকল্প হিসেবে সামনে আসে মনমোহন এবং প্রণবের নাম। কংগ্রেস সভানেত্রীর সমর্থন ছিল মনমোহনের দিকে।
২০০৪ সালে তিনি ভারতের ১৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কংগ্রেস জোটের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মনমোহন।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৫১মিনিটে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে (এআইআইএমএস) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
More Stories
অবৈধ বাংলাদেশি ইস্যুতে উত্তপ্ত দিল্লি, বিজেপি-আপের সংঘাত চরমে
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু নিয়ে বিজেপি ও সেখানকার ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির...
বাংলাদেশের জনগণই দুই দেশের সম্পর্কের প্রধান অংশীদার: ভারত
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ভারত জোর দিয়ে বলছে যে, বাংলাদেশের জনগণই দুই দেশের সম্পর্কের প্রধান অংশীদার। ভারতের...
মোদীর ‘বিজয় দিবসের’ বার্তা ঘিরে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় দিবসকে ১৯৭১ সালে 'ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়' বর্ণনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি স্ট্যাটাস দেয়ার পর...
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় কেন, প্রশ্ন উঠছে ভারতে
ছাত্র জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী...
ঢাকা নিজ স্বার্থেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেবে: পার্লামেন্টে জয়শঙ্কর
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। নয়াদিল্লি আশা করে ঢাকা নিজ স্বার্থেই তাদের...
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিক্রম মিশ্রি : ভারতে বসে শেখ হাসিনার বিবৃতিতে সমর্থন নেই মোদী সরকারের
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বিক্রম মিশ্রি। এই ইস্যুতে তিনি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে ব্রিফিং...