বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ঐতিহ্যবাহী দল বলে দাবি করেন। কিন্তু তাদের ঐতিহ্য হলো দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা, হত্যা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য এবং ভোট চুরি। তারা ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত ‘অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের গর্বিত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে’ এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর এ সভার আয়োজন করে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা জনতার দাবি। গুলি করে ছাত্র মারার পর আওয়ামী লীগ আবার এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে কিনা তা জনতার আদালতে সিদ্ধান্ত হবে। ট্রাইবুনালে একটা সংশোধনী আনার কথা শুনছি। সংগঠন হিসেবে, রাজনৈতিক দল হিসেবে যদি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হয় তাহলে রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও দলের বিচার হবে। সেই সংশোধনী যদি আইনে আনে এবং ট্রাইবুনালে যদি বিচার হয় সেই বিচারের ফলাফল কী হয় তখন দেখা যাবে। আমরা এখন কোনো ফয়সালা দিতে চাই না। গণহত্যাকারী কোনো দল বাংলাদেশের রাজনীতি করতে পারবে কিনা তা আদালত ও দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে। আমাদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নেই। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে, সবাই গ্রহণ করেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রশাসনিক আদেশে বা আমি-আপনি চাইলে কেউ নিষিদ্ধ হোক সেই দায়িত্ব আমরা নিতে চাই না। দেশের জনগণ যদি চায় তাহলে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে সিদ্ধান্ত নেবে।
সভায় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগস্ট বিপ্লবের শহিদরা জাতীয় বীর। দেশ ও জাতির জন্য তাদের এই আত্মত্যাগের কথা কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের জন্য যথাযথ সম্মানের ব্যবস্থা করতে হবে।
নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণহত্যার নেত্রী ও তাদের দোসররা ভারতে পালিয়ে গেছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্যক্তির বিচার করলেই চলবে না, বরং দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের আগস্ট বিপ্লবের শহিদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবেন।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। তাই তাদের বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও অসংখ্য আলেম-উলামাকে হত্যা এবং আয়নাঘরের মাধ্যমে জাতীয় নেতাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধ হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং তাদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় কূটনৈতিক কোরের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান, বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতা এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং অর্ধ সহস্রাধিক হাত-পা হারানো ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
More Stories
দায়িত্ব নেওয়ার সময় নির্বাচন দেওয়ার কোনো শর্ত ছিল না : সাখাওয়াত হোসেন
দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি না, তা নির্বাচন কমিশনই বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার...
জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে বিভাজন ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে : এনসিপি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, ঘৃণা ও সহিংসতার রাজনীতি উসকে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক...
আপাতত লন্ডন যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া, আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনের হাসপাতালে নিতে কাতারের ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হযরত...
‘আমি ভালো আর সব খারাপ’— আওয়ামী আমলের এই প্রচার এখনো চলছে: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমি ভালো আর সব খারাপ। এ রকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি ১৬ বছর ধরে।...
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল অনুরোধ পূরণ করছে সরকার: প্রেস সচিব
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত তার পরিবারের সকল অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকার পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন...
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন শুরু রোববার
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোবিবার (৭ ডিসেম্বর)।...
