ভারতের বিখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা কালিম সিদ্দীকীকে যাবজ্জীবন কারদণ্ড দিয়েছে স্থানীয় একটি আদালত। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা ও এন্টি টেরোরিজম স্কোয়াডের (NIA-ATS) বিশেষ আদালত ওই রায় প্রদান করে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি জোরপূর্বক হিন্দুদেরকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। ফলে ধারা ১৫৩ এ (ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি), ধারা ১৫৩ বি (বক্তব্যের মাধ্যমে উত্তেজিত করা), ধারা ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ২০২১ এ প্রণীত ধর্মান্তরিত আইনের লঙ্ঘনসহ ইউপি সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও আইন অমান্যের ভিত্তিতে তাকেসহ মোট ১৬ জনকে এই সাজা দেয়া হয়।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য ইসলামী ব্যক্তিত্বরা হলেন উমর গৌতম, মুফতী কাজি জাহাঙ্গীর আলম কাজমী, প্রকাশ রামেশ্বর কাভাদে ইলিয়াস আদম, কাউসার আলম, ভূপ্রিয় বন্ধু ইলিয়াস আরসালান মুস্তাফা, ফারাজ বাবুল্লাহ শাহ, ইরফান শেখ ইলিয়াস ইরফান খান, রাহুল ভোলা ইলিয়াস রাহুল আহমাদ, মান্নু যাদব ইলিয়াস আব্দুল মান্নান, সালাউদ্দিন যাইনুদ্দিন শেখ, আব্দুল্লাহ উমর, মুহাম্মদ সালিম, কুনাল আশোক চৌধুরী, ধীরাজ গোবিন্দ রাও জাগতাপ ও সরফরাজ আলি জাফরী।
তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, ধর্মান্তরিতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কেউ এমন অভিযোগ করেননি। ইতোপূর্বে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখনো তার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার মতো লোক পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলাম ধর্মে প্রভাবিত করা ও লাভ জিহাদসহ আরো কয়েকটি উদ্ভট অভিযোগে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার ২০২১ সালের বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) তাকে সর্বপ্রথম গ্রেফতার করে।
তার বিরুদ্ধে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদির প্রশাসনের প্রধান অভিযোগ ছিলো জামিয়া ওয়ালি উল্লাহ ট্রাস্ট যার আওতায় ভারতজুড়ে হাজার হাজার ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াতী মিশনের মাদরাসা রয়েছে, তার মাধ্যমে তিনি ৩ কোটি বিদেশি অর্থ গ্রহণ করেছিলেন।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বরে মুসলিম অধ্যুষিত আসাম, কাশ্মীর সহ অন্যান্য এলাকায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমানোর লক্ষ্যে নাগরিকত্ব আইন পাশের মাধ্যমে ভারতজুড়ে যে বিতর্ক ও দাঙ্গা দেখা দিয়েছিলো এরজন্যও এই প্রখ্যাত দাঈকে দায়ী করা হয়েছিলো। কেননা দিল্লির শাহীনবাগ যেখানে কালিম সিদ্দিকীর বসবাস, সেই এলাকাটি ক্রমেই দাঙ্গাটির কেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠেছিলো।
মুসলিম তরুণদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে হিন্দু তরুণীগণ তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার ঘটনা যদিও অনেক প্রাচীন এবং স্বাভাবিক একটি বিষয়, কিন্তু এরপরও হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী মোদি সরকার একে জিহাদের অন্যতম একটি শাখা বলে প্রচার করে নিজেদের ইসলাম বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটায়। একে তারা লাভ জিহাদ বলে নাম দেয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন ফৌজদারি আইনও প্রণয়ন করে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে লাভ জিহাদের মূলহোতা রূপে তারা কালিম সিদ্দিকীকে দায়ী করছিলো।
কেননা ইসলামের সততা, ন্যায়নিষ্ঠতা ও আখলাকে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা কালিম সিদ্দিকী, তার সহযোগী ও শিষ্যদের কাছে ইসলামে দীক্ষিত হতে ভীড় জমাচ্ছিলো।
এছাড়াও তার সংস্পর্শে এসে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের অভাবনীয় পরিবর্তন ভাবিয়ে তুলছিলো ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষমতায় আসা মোদি সরকারকে।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর কট্টর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের সংগঠন বিজেপি, আরএসএস ও অসংখ্য কর সেবক কর্তৃক ঐতিহাসিক শহীদ বাবরি মসজিদের ধ্বংসযজ্ঞে যে কর সেবক বালবীর সিংহ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই তিনিই পরবর্তীতে মাওলানা কালিম সিদ্দিকীর সংস্পর্শে এসে মুহাম্মদ আমীর হয়ে গিয়েছিলেন।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর বাবরী মসজিদ ও নিরপরাধ নিরীহ মুসলিমদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রায়শ্চিত্ত করতে ভারতজুড়ে তিনি ১০০ টিরও বেশি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া ও সিয়াসত ডেইলি
More Stories
হঠাৎ পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত, পাকিস্তানের কাশ্মিরে বন্যা
পাকিস্তানের কাশ্মিরের প্রধান নদীতে হঠাৎ করে বেড়েছে পানির প্রবাহ। এতে করে সেখানে মাঝারি বন্যা দেখা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সেখানকার বাসিন্দাদের...
ভারতে সহিংসতা: বাংলাদেশের মন্তব্যের কড়া জবাব দিল্লির
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জইসওয়াল শুক্রবার তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের মন্তব্য নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য...
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের ‘ইঙ্গিতপূর্ণ কথা’
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায়। এছাড়া ভারত গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) নয়াদিল্লিতে...
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন: বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা নেই ভারতের। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে ভারতের একাধিক সরকারি...
বাংলাদেশের মতো অভ্যুত্থানের শঙ্কা ভারতেও
ভারতের কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার ও তাদের মূল সংগঠন কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মধ্যে সম্পর্ক...
‘র’ এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ : তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারতের
যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং ‘র’-এর ওপর যে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে, সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে...