গণবিপ্লবের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে পালানোর আগে ছাত্র ও জনতার বিপ্লবকে ঠেকাতে হাসিনা সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন। এতে করে নিহত হন শত শত মানুষ।
সাধারণ মানুষকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত শতাধিক মামলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, নির্যাতন, গুম, অপহরণ, মানবতাবিরোধী এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ।
এসব অপরাধের বিচার করতে এখন শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার দাবি উঠেছে। হাসিনাকে ফেরত আনা যাবে? ভারত কী তাকে ফেরত দেবে? এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছে বিশ্লেষণী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য কনভারসেশন’। তারা বলেছে, ভারত শেখ মুজিবুর রহমানের দুই খুনিকে ফেরত দিয়েছে। চাইলে শেখ হাসিনাকেও ফেরত দিতে পারবে।
বিশ্লেষণে ‘দ্য কনভারসেশন’ বলেছে, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ায় এখন তার অনুপস্থিতিতেই আদালত বিচার করতে পারবে। কিন্তু এতে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো বিচার শেষে আদালত যে রায় দিবে সেটি কার্যকর খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
ফলে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরপরই তাকে ভারত থেকে ফেরানোর দাবি ওঠে। তবে ভারত হাসিনাকে আদৌ ফেরত দেবে কি না সেটি একদমই নিশ্চিত নয়।
কিন্তু বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইতে পারবে। কারণ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়। ২০১৬ সালে চুক্তিটি সংশোধন করা হয়। যেন অপরাধীদের সহজেই ফিরিয়ে আনা যায়। আর বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই এই প্রত্যর্পণ চুক্তি করতে মরিয়া ছিল।
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ চুক্তিটি করতে চেয়েছিল। কারণ ১৯৭৫ সালে সেনা অভ্যুত্থানে নিহত শেখ মুজিবুর রহমানের দুই হত্যাকারী ওই সময় ভারতে অবস্থান করছিল। হাসিনার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার এ দুজনকে ফিরিয়ে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিল।
দণ্ড কার্যকরের ঝুঁকি থাকায় কানাডার মতো কিছু দেশ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফেরত দেয় না। কিন্তু ভারতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ফলে বাংলাদেশে ফিরে শেখ মুজিবুরের হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলানোর ঝুঁকি থাকলেও দুইজনকে ২০২০ সালে ফেরত দিয়েছিল ভারত।
তারা হলেন- সেনাবাহিনীর রিসালদার মোসলেউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন আব্দুল মজিদ। এর মধ্যে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল ক্যাপ্টেন আব্দুল মজিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
অপরদিকে এই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার জেনারেল সেক্রেটারি অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দিয়েছিল বাংলাদেশ।
দ্য কনভারসেশন আরও জানিয়েছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কোনো অপরাধে এক বছরের বেশি সময়ের কারাদণ্ড হলে অপরাধীকে ফেরত দেওয়া যাবে। এবং অপরাধটি অবশ্যই দুই দেশেই দণ্ডনীয় হতে হবে। হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে এসব অভিযোগের বিচার ভারতে করা যায়। হাসিনার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলোর শাস্তিও যথেষ্ট হবে। যার অর্থ হাসিনাকে ফেরত দেওয়া যাবে।
সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, চুক্তিতে থাকা ১০ নম্বর শর্তটি বিষয়টি আরও সহজ করে দিয়েছে। এ শর্তে বলা আছে, কারও বিরুদ্ধে শুধুমাত্র গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেই তাকে প্রত্যর্পণ করা যাবে। এজন্য অপরাধীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী কোনো প্রমাণ দেখাতে হবে না। তবে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি।
হাসিনার প্রত্যর্পণ সহজ হবে না
তবে চুক্তিতে একটি বিষয় উল্লেখ আছে। সেটি হলো রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো মামলা হলে কাউকে প্রত্যর্পণ করা যাবে না। আর এ বিষয়টি কাজে লাগিয়ে ভারত হাসিনাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।
আবার এই চুক্তিতেই উল্লেখ আছে হত্যাচেষ্টা, হত্যা, অপহরণ ও হত্যায় উস্কানি দেওয়া অপরাধগুলো রাজনৈতিক মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে না। হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই এই ক্যাটাগরিতে পড়েছে।
এছাড়া হাসিনার নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয় তাহলে তাকে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর মর্যাদা দেওয়া হতে পারে। এতে করে তার প্রত্যর্পণের দাবিটির আর কোনো মূল্য থাকবে না। কারণ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যর্পর্ণ করা যায় না।
শেখ মুজিবুর রহমান সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু এবার তার ভারতে থাকার বিষয়টি জটিল হয়ে পড়েছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার তার কূটনীতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে।
প্রকাশনীটি বলেছে, প্রত্যর্পণের বিষয়টি চুক্তির চেয়ে কূটনীতির উপর বেশি নির্ভরশীল। কারণ শুধুমাত্র আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই কাউকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
Next post
বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রম চালাতে পারবে না আ.লীগ: উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত
More Stories
সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যাতে নিরাপদে থাকে: সালাহউদ্দিন
ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না বরে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।...
‘চারদিকে ছড়িয়ে থাকা লাখ লাখ হাদির মতো আমিও ভয় পাই না’
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা ও পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল...
দেশে ফিরছেন তারেক রহমান: প্রস্তুত হচ্ছে বাড়ি-কার্যালয়
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। এ উপলক্ষে তার বাসভবন ও কার্যালয়ের সংস্কার কাজ প্রায় সম্পন্ন...
হাদির পরিবারকে সান্ত্বনা প্রধান উপদেষ্টার, সর্বোত্তম চিকিৎসার আশ্বাস
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর...
সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত, লড়াই চলছে
সুদানে সন্ত্রাসীদের হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শনিবার খুদে বার্তায় এ কথা জানায়। আইএসপিআর...
‘হাদির অস্ত্রোপচারের সময় দুইবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) অস্ত্রোপচারের সময় দুইবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট...
