Read Time:10 Minute, 31 Second

সিন্ডিকেট করে অর্থ আত্মসাৎ ও মানবপাচারের অভিযোগে সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, সাবেক সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, নিজাম হাজারী ও বেনজীর আহমেদসহ ১০৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন আফিয়া ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী আলতাব খান। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পল্টন থানার ওসি মোল্লা মো. খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আমি নিয়মিতভাবে সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। পক্ষান্তরে বিবাদীগণ একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্র। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার প্রবাসী শ্রমিকদের বাংলাদেশ হতে বিদেশে চাকুরীর উদ্দেশ্যে গমনের জন্য সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট মাফিয়া চক্র গড়ে তোলেন এবং হাজার হাজার শ্রমিকের নিকট হতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ দেশ ও বিদেশে গড়ে তোলেন।
উল্লেখ্য, জনশক্তি রপ্তানিতে দুই হাজারের অধিক রিক্রুটিং এজেন্ট থাকা সত্ত্বেও মামলার আসামিরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে জঘন্য অপরাধ করেছেন। মামলার ২নং আসামি সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন সরকারি চাকুরীরত অবস্থায় নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছেলেকে সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আর ১নং আসামি সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ তার পরিবারের সদস্য অর্থাৎ তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ছেলেকে বিধিবহির্ভূতভাবে একটি প্রবাসী নামক অ্যাপ চালু করার অনুমোদন দিয়ে চক্রকে সহযোগিতা করেছেন।
গত ২০২২ সালের ১ অক্টোবর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলে আমি যথানিয়মে মালয়েশিয়া কোম্পানি হতে আমার লাইসেন্সের মাধ্যমে চাহিদাপত্র গ্রহণ করি এবং যথানিয়মে কাজ শুরু করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে ১নং আসামি মন্ত্রী ইমরান ও ২নং আসামি সচিব জানান যে তাদের নির্ধারিত ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কাজ করতে হবে। ১ ও ২নং বিবাদী তাদের আজ্ঞাবহ ৩ থেকে ২৬নং বিবাদীগণসহ তাদের সিন্ডিকেটভুক্ত ১০০ লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রসেসিং করতে বলেন।
আমি তাদের নির্দেশ মোতাবেক যোগাযোগ করলে প্রত্যেকেই মন্ত্রী ও সচিবদের কথিত মতে প্রত্যেক শ্রমিকের ভিসা প্রসেসিং বাবদ তাদের দেড় লাখ টাকা দিতে বলেন। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে শ্রমিক পাঠানোর জন্য ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নেওয়ার কথা। যারা বাড়তি টাকা নেবেন তারা মানবপাচার আইনের আওতায় আসবেন।
এ অবস্থায় আমি কোনোভাবে শ্রমিকদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারব না জানালে উক্ত বিষয়টি মামলার ৩ থেকে ২৬নং আসামিরা ১ ও ২নং আসামিকে অবহিত করেন। মন্ত্রী ও সচিব আমাকে ডেকে নেন। দেড় লাখ টাকা না দিলে এ মার্কেটে ব্যবসা করতে পারব না মর্মে হুমকি দেন।
১ ও ২নং আসামি আমাকে তাদের নির্ধারিত ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে যে কারও সঙ্গে কাজ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। আমি অসহায় হয়ে সে অনুযায়ী কাজ করা শুরু করলে ৩ থেকে ২৬নং বিবাদী বিভিন্ন খাতসমূহ দেখিয়ে টাকা-পয়সা চাওয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে মন্ত্রী ও সচিবের মধ্যস্থতায় জনপ্রতি শ্রমিক বাবদ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করলে ৩ থেকে ২৬নং আসামিরা আমার দেওয়া শ্রমিকদের পাসপোর্ট, ভিসা ও ম্যানপাওয়ারসহ আমাকে বুঝিয়ে দেবে বলেন।
সে মোতাবেক শ্রমিকের চাপ সহ্য করতে না পেরে আমি তাদের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর হতে ৮ মে পর্যন্ত মোট ১২ কোটি ৫৬ লাখ এক হাজার টাকা প্রদান করি। এমনকি তাদের বিরূপ আচরণে আমার প্রায় আরও ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। ফলে আমার সর্বমোট ৩২ কোটি ৫৬ লাখ এক হাজার টাকা ক্ষতি হয়।
তাদের আচরণ সহ্য করতে না পেরে হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট মামলা (মামলা নং-৪৩৭/২০২৩) দায়ের করলে আদালত মামলার গুণাগুণ বিবেচনা করে আসামিদের বিরুদ্ধে রুল ইস্যু করেন। এতে বিবাদীগণ সংক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে আর ব্যবসা পরিচালনা করতে দেবেন না মর্মে হুমকি প্রদান করেন। তারা আমার অনেক ক্ষতি সাধন করবেন মর্মে হুমকি প্রদান করেন। আমি জীবনের ভয়ে রিট মামলাটি প্রত্যাহার করি।
এমতাবস্থায় দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি যে আমার মতো আরও অনেক অসহায় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়ার ম্যানপাওয়ার সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে পাচার হয়েছে। আমি ৩ থেকে ২৬নং আসামিদের কাছ থেকে আইনবহির্ভূতভাবে নেওয়া অর্থ ফেরত চাইলে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে হুমকি-ধামকি প্রদান করতে থাকেন। গত ৩১ আগস্ট আসামিদের অনেকে আমার অফিসে এসে খোঁজাখুঁজি করেন এবং জীবননাশের হুমকি দেন।
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, পরস্পর যোগসাজশে তারা আমার সরলতার সুযোগে ভয়ভীতি ও বলপ্রয়োগ করে মানবপাচারের উদ্দেশ্যে আমার নিকট হতে জোরপূর্বক অতিরিক্ত চাঁদাস্বরূপ দেড় লাখ টাকা হারে ৮৪১ জনের নিকট হতে ১২ কোটি ৫৬ লাখ এক হাজার টাকা আদায় করেছে। এ ছাড়া তারা সংঘবদ্ধভাবে অন্যান্য ব্যবসায়ীর নিকট হতে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী (৫৯), ইম্পেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান (৫০), ব্রাদারস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম (৫৩), যেজি আলফানা ম্যানেজমেন্টের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সোহেল রানা (৩৮),অপরাজিতা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী আরিফুর রহমান (৪২), ট্রান্স এশিয়া ইন্টিগ্রেট সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল আবু জাহেদ (৪৮), ইউনাইটেড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম রফিক (৫৩), কিউ কে কুইক এক্সপ্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবিন (৪৫), নাতাশা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মাদ নাজিবুর রহমান (৪০), আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন (৫৪), জিএমজি ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মওলা (৫৭), আল ফারা হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড কনসালটেন্সির স্বত্বাধিকারী জাকির আহমেদ ভূঁইয়া (৪৭), ম্যানপাওয়ার কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মাহবুব আলম (৫৩), মদিনা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন মজুমদার (সিরাজ),আল খামিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রেজিয়া বেগম (৫২), স্ট্যানফোর্ড এমপ্লয়মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার রায় (৫৩), সুলতান ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী আলতাব হোসেন (৬০), জান্নাত ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী লিমা বেগম (৫০)সহ ১০৩ জন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post বাফলা’র সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
Next post আমাদের দোষ-ত্রুটি হলে লেখেন, আপনাদের কথা শুনতে চাই: সম্পাদকদের ড. ইউনূস
Close