দেশ থেকে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেখ হাসিনাকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তা আনিসুল হককে প্রশ্ন করেন, ‘২০১৮ সালে যখন কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়, তখন ছাত্ররা সব কোটা বাতিল চায়নি। তারা সংস্কার চেয়েছে। কিন্তু আপনারা কোটা বাতিল করে দিলেন কেন?’ জবাবে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এসব হয়েছে শুধু প্রধানমন্ত্রীর রাগ এবং একগুঁয়েমির কারণে।’
ডিবি কর্মকর্তার প্রশ্ন ছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী যেহেতু রাগ করে কোটা বাতিল করেছেন, তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। এটা দেখিয়েই তো আপনি আইনমন্ত্রী হিসাবে পদত্যাগ করতে পারতেন?’ এ সময় আনিসুল হক বলেন, ‘শেখ হাসিনার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আপনারা যেমন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ মানতে বাধ্য, আমরা তেমন শেখ হাসিনার আদেশ মানতে বাধ্য ছিলাম।’
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতনের অন্যায় আদেশ মানতে বাধ্য না। আর অন্যায় আদেশ মানিনি বলেই দীর্ঘদিন পদোন্নতি হয়নি। পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল খারাপ জায়গায়। আপনারাও তো অন্যায় আদেশ না মানার দৃষ্টান্ত দেখাতে পারতেন।’ সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই দায়ী। কারণ তিনি আমাদের কারও কথা শুনতেন না।’
ডিবি কর্মকর্তা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘আপনারা যারা উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও নেতা ছিলেন তারা শেখ হাসিনাকে বোঝাতে পারেননি। আপনারা যদি সবাই শেখ হাসিনাকে সঠিক বার্তা দিতেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই বুঝতেন। তারপরও আপনাদের কথা না শুনলে আপনারা কয়েকজন পদত্যাগ করতেন।’ আনিসুল হক বলেন, ‘আপনারা জানেন না শেখ হাসিনা কত বড় একরোখা মানুষ।’
তখন ডিবির প্রশ্ন, ‘আপনারা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি। নিজেদের বিবেকের কাছ কী দায় এড়াতে পারবেন? এ সময় তিনি না-সূচক জবাব দেন।’
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি তো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বানিয়েছেন, এতে লাভ কী হয়েছে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বানাইনি। এটা তো তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে।’
এ সময় ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘যে মন্ত্রণালয়ই আইন তৈরি করুক না কেন সেটা ভেটিংয়ের জন্য তো অবশ্যই আইন মন্ত্রণালয়ে গেছে। তখন আপনি ভূমিকা নিলেন না কেন? উপরন্তু বিতর্কিত আইনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আর ওই আইনের মাধ্যমে অনেক সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাকে হয়রানি-নির্যাতন করা হয়েছে।’ এ সময় চুপ হয়ে যান সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
ডিবির এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি তো মেনে নিয়েছিলাম। তারা যে এত দ্রুত সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে যাবে তা বুঝতে পারিনি।’
তাকে প্রশ্ন করা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আপনারা কেন বাতিল করলেন? জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘আদালত স্বাধীন। এ-সংক্রান্ত রায় আদালত থেকে এসেছে। সরকার শুধু বাস্তবায়ন করেছে।’
ডিবির ওই কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন, ‘আদালত তো বলেছিলেন, সরকার চাইলে আরও দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখতে পারে। আপনারা কেন সেটা রাখলেন না? জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘এটি শেখ হাসিনার ইচ্ছায় হয়েছে।’
More Stories
এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চায় ৬১ শতাংশ মানুষ
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অগাস্টের ৮ তারিখ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী...
নির্বাচনে যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে : তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে। সাবেক স্বৈরাচার দেশি-বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র...
অন্তর্বর্তী সরকার ফেল করলে আমাদের বিপদ আছে : এ্যানি
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করাই...
উগ্রবাদীদের সাথে সরকারের একটি অংশ মিলে হিন্দুদের উচ্ছেদে চেষ্টা চালাচ্ছে: চিন্ময় কৃষ্ণ দাস
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী অভিযোগ করেছেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে যেখানেই আন্দোলন হয়েছে, সেখানেই...
আ.লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: নুর
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে...
গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না: প্রেস সচিব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গে জড়িতরা...