সংসদে আগুন ধরিয়ে দেওয়াসহ রক্তাক্ত বিক্ষোভের জেরে অবশেষে বিতর্কিত ‘ট্যাক্স বৃদ্ধি সম্বলিত অর্থ বিল’ প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিলেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো।
বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে, কেনিয়ানরা বিলটির বিষয়ে ‘কিছুই চায় না’।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট এসময় নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি যে, আমি এই বিলে স্বাক্ষর করব না’।
রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত কেনিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (কেএনএইচআরসি) দেওয়া তথ্য অনুসারে, মঙ্গলবারের বিক্ষোভে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন।
উইলিয়াম রুটো বলেন, তিনি এখন তরুণদের সঙ্গে সংলাপে বসবেন, যারা ২০২২ সালের নির্বাচনের পর দেশটিতে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় এই বিক্ষোভের অগ্রসেনা ছিলেন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কেনিয়ার জনগণের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছি, যারা বিক্ষোভের মাধ্যমে উচ্চস্বরে বলেছে যে, তারা এই অর্থ বিল চায় না। আর তাই আমি স্বীকার করছি যে, আমি ২০২৪ অর্থ বিলে স্বাক্ষর করব না এবং এটি দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে’।
সম্প্রতি কেনিয়ায় রুটির ওপর ১৬ শতাংশ, মোটর গাড়ির ওপর ২.৫ শতাংশ কর আরোপ করে সরকার। আফ্রিকান গরিব দেশটির প্রধান খাদ্য রুটির এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানাচ্ছিলেন প্রচুর মানুষ।
বিলটির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সত্ত্বেও মঙ্গলবার কেনিয়ার সংসদে বিলটি পাস হয়। এর জবাব হিসেবে বিক্ষোভকারীরা সংসদে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায় এবং সংসদ ভবনের কিছু অংশে আগুন দেয়। এসময় আইনসভার কর্তৃত্বের প্রতীক জাকজমক দণ্ডটি চুরি হয়ে যায়।
এমন প্রেক্ষাপটে পেসিডেন্ট রুটো প্রথমে শক্ত হাতে দমন করা নীতি গ্রহণ করেন। তিনি সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়ে বলেন যে, দেশে কোনোরকম ‘সহিংসতা ও নৈরাজ্য’ সহ্য করা হবে না।
কিন্তু বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনায় জনগণের ক্ষোভ বেড়ে যাওয়ায় বুধবার প্রেসিডেন্ট তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং বিলটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এদিকে বিক্ষোভের বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান ওয়াঞ্জেরি এনডেরু জানিয়েছেন, বিক্ষোভের সময় যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা ছিল ‘যেন আমরা যুদ্ধের ময়দানে ছিলাম।’
দেশটির ক্যাথলিক বিশপরাও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন এবং ‘বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর জন্য পুলিশের প্রতি আবেদন জানান’। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও কেনিয়ায় বিক্ষোভ ও বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত সাংবাদিক ও চিকিৎসা কর্মীদের হতাহতের ঘটনায় দুঃখ ও গভীর শোক প্রকাশ করেন।
তিনি কেনিয়ার কর্তৃপক্ষকে ‘সংযম চর্চা’ করার জন্য এবং বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি
More Stories
সৌদিতে সাত দিনে ২২ হাজারের বেশি অভিবাসী আটক
সৌদি আরবে আবাসন ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে চলা অভিযানে এক সপ্তাহে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটি।...
ওমরাহতে যাওয়ার আগে রিটার্ন টিকিট বাধ্যতামূলক করলো সৌদি
এখন থেকে সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গেলে রিটার্ন টিকিট কাটতে হবে ও যাত্রার সময় চেক-ইন কাউন্টারে ফিরতি টিকিট দেখানো বাধ্যতামূলক...
হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিচার নিয়ে যা বললেন ভলকার তুর্ক
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা...
হাসিনার দশা হলো মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের
আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছে ফরাসি রেডিও আরএফআই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল...
বিজ্ঞানের ‘সমতার শক্তিতে’ ফিলিস্তিনি শরণার্থী থেকে নোবেল জয়
জর্দানে ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারের সন্তান হিসেবে একদমই সাধারণ পরিবেশে জন্ম নেওয়া রসায়নে নোবেল বিজয়ী ওমর এম ইয়াগি বুধবার বিজ্ঞানের ‘সমতার...
স্ত্রীর চিৎকারে ভেবেছিলেন ভালুক, পরে শোনেন নোবেল জিতেছেন
মন্টানার রকি পর্বতমালায় ক্যাম্পিং ও হাইকিং করছিলেন প্রফেসর ফ্রেড র্যামসডেল। হঠাৎ স্ত্রীর চিৎকার শুনে ভাবেন, হয়তো ভালুক এসেছে। কিন্তু পরে...
