অবৈধ টাকা ব্যাংক ব্যবস্থায় নিয়ে আসার জন্যই বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এটাকে বড়শিতে আধার গেঁথে মাছ ধরার সঙ্গেও তুলনা করেন।
শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা প্রশ্ন এসেছে কালো টাকা নিয়ে। অনেকে বলে, তাহলে আর কেউ কর দেবে না। ঘটনা কিন্তু তা না। এটা শুধু কালো টাকা না, জিনিসের দাম বেড়েছে। এখন এক কাঠা জমি যার, সেই কোটিপতি। সরকারি হিসাবে কেউ বেচে না, বেশি দামে বেচে, কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হয়। এই টাকাটা তারা গুঁজে রাখে। তাই গুঁজে যাতে না রাখে, সেজন্য সামান্য কিছু দিয়ে টাকাটা পথে আসুক, জায়গামতো আসুক। তার পর তো কর দিতেই হবে।
তিনি বলেন, আমি ঠাট্টা করে বলি, মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়। আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। সে রকম একটা ব্যবস্থা এটা। এ রকম আগেও হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক আমলেই শুরু করেছিল, প্রত্যেক সরকারই করে। আমরা এবারও সেই সুযোগ দিচ্ছিলাম, যে অল্প কর দিয়ে টাকাটা আগে ব্যাংকে নিয়ে আসো। অর্থাৎ, টাকাটা উদ্ধার হোক। আর এই ব্যবস্থা নিয়েই নানাজনে নানা কথা বলছেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মানুষের মৌলিক চাহিদা ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ বাজেট মানুষের জীবন উন্নত করবে, নিশ্চয়তা দেবে। তবে বাজেটে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বিশেষ করে খাদ্যমূল্য, সেখানে উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা উৎপাদনমুখী হলে খাদ্যে কোনো দিন অভাব হবে না। বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে চলতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণ ভোট দেয় বলেই আমরা ক্ষমতায় আসি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে মনে রাখতে হবে– জনগণই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের প্রতি মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস, তা ধরে রেখে কাজ করতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, অনেকে বসে বসে হিসাব কষেন, আগে এত শতাংশ বেড়েছে, এবার কম কেন? এখন সীমিতভাবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্য রেখেই এ বাজেট দিয়েছি।
করোনাভাইরাস ও যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারির ফলে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে, আমরাও তাতে পড়ে গেলাম। এর পর এলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। ফলে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে আগে খাওয়াতে হবে। রিজার্ভ কত আছে না আছে, তার চেয়ে বেশি দরকার মানুষের চাহিদা পূরণ। মূল্যস্ফীতি বেশি বলে আমরা নিম্ন আয়ের মানুষকে পারিবারিক কার্ড দিচ্ছি। আমরা চাল উৎপাদন চার গুণ বাড়িয়েছি। প্রতিটি জিনিসের উৎপাদন বাড়িয়েছি। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা ও খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। এখন কমপক্ষে দুই বেলা খাবার পাচ্ছে মানুষ। একেবারে হতদরিদ্রদের বিনা পয়সায় খাবার ও সামাজিক নিরাপত্তা দিচ্ছি।
বাজেটে মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসে কর কমানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাজেট দেওয়া হয়েছে। আমি জানি কারও ভালো লাগে, কারও লাগে না। বাজেট ঘাটতি নিয়েও অনেকে কথা বলেন। আমি সরকারে আসার পর এটা ২১তম বাজেট। সব সময় আমরা ৫ শতাংশ বাজেট ঘাটতি রাখি। এবারও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রাখা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি উন্নত দেশেও আছে। আমেরিকায় খবর নেন, বাজেট ঘাটতি কত? উন্নত দেশে এর চেয়েও বেশি বাজেট ঘাটতি থাকে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেকে অনেক কিছু খেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণ আওয়ামী লীগকে চতুর্থবারের মতো দেশসেবার সুযোগ করে দিয়েছে। অনেকেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে। আমরা দেশে একটা পরিবর্তন আনতে পেরেছি। নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করব; কারও কাছে হাত পেতে চলব না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে আমরা কাজ করেছি বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে চলতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ ভাগের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলাম। মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি। কিন্তু পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে টানা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল; জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া এবং পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার– এই ২৯ বছরে তারা কেউ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছে।
আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রমুখ।
More Stories
আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেন জামায়াত আমির
সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী ভারতসহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আমির...
শাহজাহান ওমরের হুংকার, ‘আমি আবারও এমপি-মন্ত্রী হব’
গ্রেপ্তারের পর ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হুংকার দিয়ে বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, এসব মামলা আমার...
মুহাম্মদ ইউনূসকে যেতে দেবেন না, ধরে রাখুন : শফিক রেহমান
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান। তিনি বলেন, “তাকে...
বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস
ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে সেগুলোর বিচার শেষে দলটিকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে বলে...
সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া
ছয় বছর পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল হাস্যাজ্জ্বল খালেদা জিয়াকে। সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে...
শেখ হাসিনাকে ফেরানোর নির্দেশনা নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে দুই দেশের বৈঠকে আলোচনার সুযোগ...